ঢাকা     শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪ ||  শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

এক যুগ ট্রেনে ভ্রমণের ভাড়া পরিশোধ করলেন বেলাল

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৮, ২১ মে ২০২৪   আপডেট: ১৯:৫৩, ২১ মে ২০২৪

চাকরি জীবনের আগে প্রায় ১২ বছর সোনাতলা উপজেলা থেকে বগুড়া শহরে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন বেলাল উদ্দিন (৬৪) নামের এক ব্যক্তি। এক যুগ অধিকাংশ সময় টিকিট ছাড়াই চলাচল করেছেন তিনি। জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসে তিনি অনুশোচনায় ভুগছিলেন। যে কারণে হিসেব করে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সাজুর কাছে গিয়ে ৭ হাজার টাকা টিকিটের দাম পরিশোধ করেন তিনি। 

মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে বেলাল উদ্দিন স্টেশন মাস্টারের কাছে বিষয়টি জানিয়ে তার বকেয়া টাকা জমা দেন। পরে বিষয়টি স্টেশন মাস্টার সাংবাদিকদের জানান।

বেলাল উদ্দিন বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেছেন। সর্বশেষ তিনি কাহালু উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি ২০২০ সালে অবসরে যান।

বেলাল উদ্দিন জানান, তার বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায়। তিনি ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সোনাতলা থেকে বগুড়ায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন।  তিনি বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করেছেন। সপ্তাহে বা মাসে দুই একবার ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়েছে তাকে। এছাড়া, আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বগুড়ায় ছিল তার। সে কারণে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার বগুড়ায়। ওই সময়গুলোতে বিনা টিকিটে ট্রেনে যাতায়াত করেছেন তিনি। 

বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এখন এসে ওই বিষয়টি আমাকে পীড়া দিচ্ছিল। একজন মুমিন বান্দার উচিত হবে- নিজের হক, বিবি-বাচ্চার হক, প্রতিবেশীর হক, আত্মীয় স্বজনের হক এবং দেশের আপামর জনগণের হক আদায় করা। এই হক আদায় করতে গিয়ে আমি বিবেকের কাছে কষ্ট পাই। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নেই, আমার জীবনের সেই হক আদায় করা দরকার। পরে আমি আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তিনি আমাকে পরামর্শ দেন, আপনি ওই টাকা টিকিটের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারেন। যাতে সরকারের কোষাগারে যায়। আজকে এসে হিসেব করে ৭ হাজার টাকা জমা দিলাম। মূলত আখিরাতের ভয় থেকেই আমি এই টাকা পরিশোধ করেছি। টাকা জমা দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।’

সাত হাজার টাকার বেশিও তো হতে পারে বা কম আপনি ৭ হাজার টাকাই কেন দিলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১২ বছরে যদি সপ্তাহে আমার দুই বার যাতায়াত করতে হয়েছে এমনটা যদি ধরি, সেক্ষেত্রে ৫২ সপ্তাহকে ১২ দিয়ে গুণ করে আবার সেটাকে ২ দিয়ে গুণ করার পর যেটা আসছে সেটাকে ট্রেনের টিকিট মূল্য ৫ টাকা দিয়ে গুণ করলে ৬ হাজার ২০০ টাকার একটু বেশি হয়। আমি ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।’

এ বিষয়ে বগুড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, বিষয়টি অনেক ভালো লাগার। তার জমা দেওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। ট্রেন আমাদের জাতীয় সম্পদ। অনেকেই বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন। এটা কোনোভাবেই উচিত না। মাঝেমধ্যে অনেকে বিবেকের তাড়নায় এরকম টাকা পরিশোধ করে যান। এর সংখ্যা অবশ্য কম। এর আগে, এক নারী ১০ হাজার টাকা জমা করেছেন।

এনাম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়