ঢাকা     রোববার   ১৬ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ২ ১৪৩১

আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে আরিফ

‘দিনে কাজ করায়, রাতে চলে নির্যাতন’

পিরোজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৩ মে ২০২৪   আপডেট: ১১:২৩, ২৩ মে ২০২৪
‘দিনে কাজ করায়, রাতে চলে নির্যাতন’

আরিফের স্বজনরা

‘কিরগিজস্তানে আমাকেসহ অনেককে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না। দালাল আমাদের কাছে টাকা চায়। টাকা দিলে নির্যাতন করবে না বলে জানিয়েছে। দিনে কাজ করিয়ে নেয়, আর রাতে আটকে রেখে মারধর করে।’

আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়া প্রতারিত পিরোজপুরের ইন্দুরকানীর যুবক আরিফ মাতুব্বরের দেশে ফেরার আকুতি জানানোর এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওতে আরিফের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরা হয়।

আরিফ মাতুব্বর ইন্দুরকানী সদর ইউনিয়নের সেউতিবাড়ীয়া গ্রামের হেমায়েত মাতুব্বরের ছেলে। আরিফের এমন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

আরিফের পারিবারিক সূত্র জানায়, দুই বছর আগে আরিফ তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে ঢাকায় ইলেকট্রনিকস দোকানে কাজ করতেন। সেখান থেকে আদম ব্যবসায়ী তুহিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তুহিন আরিফকে মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে চার লাখ টাকা নেয়। কিন্তু তাকে মালয়েশিয়ায় না পাঠিয়ে জরুরি ভিসা করে কিরগিজস্তান পাঠিয়ে দেয়। দেশটির বিমানবন্দরে নেমে আরিফ কাউকে না পেয়ে অসহায়ভাবে তিন দিন কাটান। এ সময় নিরুপায় হয়ে পাকিস্তানি একটি হোটেলে যান। পরে পুলিশি হয়রানির ভয়ে আরিফ এক দালালের মাধ্যমে কৃষিকাজে যোগ দেন। দালাল তাকে আটকে রেখে কাজ করায় এবং বিভিন্ন অজুহাতে অমানুষিক নির্যাতন করে। দালালের চোখ ফাঁকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নির্যাতনের বিষয়টি জানান আরিফ। সেই ভিডিও দেখে আরিফের বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জানা গেছে, আরিফের বাবা দিনমজুর। সংসার চালাতে মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তারা ভিটেমাটি বিক্রি করেন এবং এনজিও থেকে ঋণ নেন। এদিকে নির্যাতনের বিষয় জানানোর কারণে আদম ব্যবসায়ী তুহিন আরও টাকা চেয়ে আরিফের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তুহিনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরিফ

আরিফের বাবা হেমায়েত মাতুব্বর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, আমার ছেলেকে কিরগিজস্তান থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক। ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে আমি এখন নিঃস্ব। আরিফের এই সংবাদে পরিবারসহ অনাহারে দিন কাটাচ্ছি।

ইন্দুরকানী সদর ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মজনু হোসেন রনি বলেন, প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্র টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আরিফের পবিবার এখন শোকে কাতর।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেয়ে আমি আরিফের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।

/তাওহিদুল/ইমন/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়