ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাজশাহীর দুই নারীর চমক

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ৪ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৬:২৯, ৪ জুন ২০২৪
ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাজশাহীর দুই নারীর চমক

পপি খাতুন (বাঁয়ে) ও হাবিবা বেগম

বয়স মাত্র ২৬। জীবনে কোনদিন নির্বাচন করেননি। তারপরও সাহস করে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন পপি খাতুন। প্রচার চলাকালে ছুটে বেড়িয়েছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আরও তিন প্রতিদ্বন্দ্বির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে পপি বিজয়ী হয়েছেন। আরেক প্রার্থী হাবিবা বেগমের লড়াইটা ছিল বেশ কঠিন। ছিল অনেক বাধা। সেসব অতিক্রম করে তিনি একাই পেয়েছেন ৪২ হাজার ৯৮৪ ভোট। তার তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রাপ্ত মোট ভোট ২৫ হাজার ১০৭টি।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে রাজশাহীর এ দুই নারী দুই উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ে চমক দেখিয়েছেন। গত ২৯ মে এ দুই উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হাবিবা বেগম জেলার মোহনপুর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আর পপি খাতুন ছিলেন পবা উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। অনেকেই বলছেন, পপি খাতুনই এখন পর্যন্ত দেশের সর্বকনিষ্ঠ নারী ভাইস চেয়ারম্যান। তার জন্ম তারিখ ১৯৯৮ সালের ১২ জানুয়ারি। সে হিসাবে তার বয়স ২৬ বছর ৪ মাস।

আরো পড়ুন:

পপির বাড়ি পবা উপজেলার হুজরিপাড়া ইউনিয়নের দারুশা গ্রামে। তার বাবার নাম সুকুর আলী। পপি এখনও বিয়ে করেননি। স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মী পপি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের পবা উপজেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীও তিনি। 
রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজে স্নাতকে পড়াশোনার পাশাপাশি একজন উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করেন পপি। উপজেলা ভোটে তার বিজয়ে বিস্মিত অনেকেই।

ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ কর্মী পপি খাতুন ২৪ হাজার ২৭৯ ভোট পেয়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। উপজেলা পরিষদের বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান আরজিয়া বেগম ২২ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন। অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বীও তুমুল লড়াই করেছেন। এরমধ্যে চেন বানু ২২ হাজার ১৮ এবং হাসিনা খাতুন ২১ হাজার ৫৪৫ ভোট পেয়েছেন।

পপি বলেন, ‘এখন দিন পাল্টেছে। মানুষ তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে চাইছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রচার চলাকালে উপজেলার সব বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে পারিনি ঠিক, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গিয়েছি। ফলে ভোটাররা মনে করেছেন, আমি যেভাবে এত বড় উপজেলায় ছোটাছুটি করতে পারবো, তা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রবীণ প্রার্থী পারবেন না। তাই তারা আমাকে ভোট দিয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের ভোট সবই পেয়েছি বলে আমি মনে করছি।’

এদিকে, মোহনপুরের হাবিবা বেগম একাই পেয়েছেন ৪২ হাজার ৯৮৪ ভোট। তার তিন প্রতিদ্বন্দ্বীর মোট প্রাপ্ত ভোট ২৫ হাজার ১০৭টি। এরমধ্যে ডলি আক্তার ৮ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে হাবিবার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে সানজীদা রহমান ৬ হাজার ৯৯৮টি, রাবিয়া খাতুন ৫ হাজার ৮৬৪টি ও পলি রানী ৩ হাজার ৯৩১টি ভোট পেয়েছেন। হাবিবার ধারেকাছে নেই কেউ।

হাবিবা বেগম মোহনপুরের সব মানুষের কাছেই পরিচিত। তার বাড়ি উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের সিংহমারা গ্রামে। হাবিবার স্বামীর নাম মাসুদ রানা। তিনি কেশরহাট বাজারে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান চালান। হাবিবা আগে ঘাসিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ছিলেন। উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক নারী বিষয়ক সম্পাদকও তিনি। এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে জমি দখলসহ নানা অভিযোগ তুলে কথা বলার কারণে হাবিবা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।

আয়েন উদ্দিন এমপি থাকাকালে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই হাবিবা সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেদিন তিনি বলেন, এমপি আয়েনের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছিলেন তিনি। এরপর তার আক্রোশের শিকার হতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, একটি শিশুকে উদ্ধারের জন্য ওই বছরের ১৯ জুলাই থানায় গেলে তাকে আটক করে পুলিশ দিয়ে মারধর করান তৎকালীন সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। পরদিন আয়েনের সাবেক পিএস বিজয় ডলি আক্তার নামের এক নারীকে থানায় নিয়ে প্রতারণার মামলা করান। এরপর পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠায়। ২৩ জুলাই তিনি দুটি মামলায় জামিন পান। হাবিবা আরও অভিযোগ করেন, এর আগেও আয়েন উদ্দিনের লোকজন তাকে মারধর করে পা ভেঙে দিয়েছিল। আতঙ্কে তিনি দুই বছর বাড়িতে থাকতে পারেননি।

ভোটে বড় বিজয়ের পর হাবিবা বলেছেন, ‘ভোটের সময় সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের অনুসারিরা তাকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। তারা অন্য প্রার্থীর জন্য কাজ করেছিলেন। তবে, তাদের প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। ভোটের এই ফল সব অন্যায়ের জবাব। মানুষ যে নির্যাতিত মানুষের পক্ষে থাকে, সেটা প্রমাণ হয়েছে। এখন মানুষের কল্যাণে কাজ করবো।’

কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়