মৌলভীবাজারে বন্যার পানিতে ডুবে তিন দিনে ৬ জনের মৃত্যু
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তিন দিনে বন্যা ও নদীর পানিতে ডুবে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের বেশির ভাগই শিশু।
নিহতদের ৪ জনই মৌলভীবাজার সদর উপজেলার। এরা হলো- চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের পচন মিয়ার ছেলে ছাদি মিয়া (৮), একই গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় মিয়া (১৭), পাহাড় বর্ষিজোড়া গ্রামের লিমন সেখ (১২) ও খলিলপুর ইউনিয়নের আজিজুল ইসলাম (৬)।
অন্য দুজন হচ্ছে- বড়লেখা উপজেলার ভাগাডহর গ্রামের আয়শা বেগম (১২) ও কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের মুক্তাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাছির মিয়ার ছেলে আবু সাইদ আহমদ রেদোয়ান (৬)।
জানা যায়, সদর উপজেলার শ্যামেরকোনা গ্রামের ছাদি মিয়া (৮) রাস্তায় হাঁটছিল। হঠাৎ ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে সে পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। এ সময় তাকে উদ্ধার করতে হৃদয় মিয়া (১৭) নামের আরেক কিশোর পানিতে নামলে সেও পানিতে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ওই সময় আরেকটি ছেলে স্রোতের সাথে ভেসে গেলে তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
অপরদিকে বড়লেখা উপজেলার ভাগাডহর গ্রামের আয়শা বেগম (১২) বাড়ির পাশে নদীর পাড়ে গেলে তীব্র স্রোতে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্বজনরা তার লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে সদর উপজেলার পাহাড় বর্ষিজোড়া গ্রামের দ্বিতীয় শ্রেণির মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রিমন মিয়া (১১) মনু ব্যারেজ সংলগ্ন সুইচ গেইট এলাকায় গোসল করতে পানিতে নামে। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় একসময় সে পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ডুবুরি ইউনিট সিলেট থেকে এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পাওয়ায় তারা ফিরে যান। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা সোমবার কনকপুর এলাকা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার খলিল পুর ইউনিয়নের লামুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম (৬) বরাক নদীতে পড়ে যায়। স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি ইউনিট তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
সোমবার বিকেলে কুলাউড়ার ভূকশিমইল ইউনিয়নের মুক্তাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাছির মিয়ার শিশুপুত্র আবু সাইদ আহমদ রেদোয়ান বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার ফায়ার স্টেশনের উপ-সহপরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে, তবে এ সকল দুর্ঘটনার অধিকাংশই ঘটছে পরিবারের অবহেলা বা অসচেতনতার কারণে। পরিবারের সদস্যরা যদি ছোট বাচ্চাদের খেয়াল রাখেন এবং সাঁতার শেখান তাহলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, নিহতের পরিবারদের মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে এবং সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসন জনসচেতনতা তৈরিতে প্রশাসন কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, শিশুদের খেয়াল রাখার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামে মাইকিং করা হয়েছে এবং পরবর্তীতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
হামিদ/টিপু