ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মাদারীপুরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৭:২৩, ২৭ জুলাই ২০২৪
মাদারীপুরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ

দুষ্কৃতিকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে মাদারীপুরে। দুষ্কৃতকারীরা সরকারি-বেসরকারি ১০টি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা পুড়িয়ে দেয় একটি পেট্রোল পাম্প, ৩২টি বাস, তিনটি ট্রাকসহ একাধিক যানবাহন। মারা যান তিন জন।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্যের কমিটিরি প্রধান ছিলেন মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার রহমান। সদস্য ছিলেন এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কৃত্তনীয়া এবং বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক নুরুল হোসেন। এই কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন এবং ভাঙচুরের ঘটনায় মাদারীপুর জেলায় ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

আরো পড়ুন:

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল ছিল মাদারীপুর। এদিন, সকালে মাদারীপুর শহরের ডিসিব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢুকে পড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা। সেখানে তাদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ধাওয়া খেয়ে লেকের পানিতে পড়ে দীপ্ত দে নামে এক কলেজছাত্র মারা যান। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হামলা চালায় তারা। এসময় হামলাকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের কর্যালয়, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কর্যালয়সহ বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। সদর থানাধীন ১ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তারা।

সার্বিক পরিবহনের ডিপোতে দুষ্কৃতিকারীদের আগুনে পুড়ে গেছে ৩২টি বাস

একদিন পর শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুর ৩টার দিকে দুষ্কৃতকারীরা মস্তফাপুর থেকে হামলা চালাতে শুরু করে। প্রথমে তারা মস্তফাপুর গোল চত্বরের ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়। পরে তারা পল্লী বিদ্যুতের গেস্ট হাউসে ভাঙচুর চালায়। খাগদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও শাজাহান খানের অনুসারীদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে রোমান বেপারী ও তাওহীদ সন্নামাত নামে দুজন নিহত হন। আহত হন আরও অনেকেই।

পরে দুষ্কৃতকারীরা শাজাহান খানের মালিকানাধীন সার্বিক পেট্রোল পাম্প ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময় তারা পাম্পের পেছনে থাকা সার্বিক পরিবহনের ডিপোতে আগুন দেয়। এতে ৩২টি বাস পুড়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় আরো পাঁচটি বাস। পাম্পে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেল ও তিনটি ট্রাকও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 

এরপর দুষ্কৃতিকারীরা নতুন বাসস্ট্যান্ড, সার্কিট হাউস, লেকভিউ হোটেল, মহিলা সংস্থা কার্যালয় ও পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনে ভাঙচুর চালায়। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে শহরের শকুনিলেকের দক্ষিণপাড়ে অবস্থিত ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনটি আগুনে পুড়িয়ে দেয় তারা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নতুন বাসস্ট্যান্ডের পাশেই সাবেক মন্ত্রী ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের পেট্রোল পাম্প ও বাস ডিপো। আগুনে পুড়ে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে বাসগুলো। একই অবস্থা পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম ভবনটির। অডিটোরিয়ামের ভেতরে থাকা সব চেয়ার টেবিলসহ আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টির দশাও করুণ। সেখানে ভাঙচুর করা হয়েছে আসবাবপত্র ও দরজা-জানালা।

মাদারীপুর শহরের বাসিন্দা বিল্লাল মোল্লা বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৪০ বছর। মাদারীপুরে আমি কখনোই এমন ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি।’

সার্বিক পরিবহনের ব্যবস্থাপক গোপাল হালদার বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির বাসগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমাদের প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা পেলে পেট্রোল পাম্পসহ পরিবহন চালু করতে ৬ মাসের বেশি সময় লাগে যাবে।’

মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে পৌর অডিটোরিয়ামের ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে ইস্যু করে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন চোরাগুপ্ত হামলা চালিয়েছে।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশীদ খান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করা হয়েছে। পুরো জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা।’

মাদারীপুরের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র ভাস্কর সাহা বলেন, বিভিন্ন হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫টি মামলা হয়েছে। নাম না জানা  ৮ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিদিনই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়