ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পটুয়াখালীতে দানার প্রভাব

ভেঙে যাওয়া ঘর কীভাবে তুলবেন, জানেন না দুলালরা

মো. ইমরান, পটুয়াখালী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৬ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ২২:৫৭, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
ভেঙে যাওয়া ঘর কীভাবে তুলবেন, জানেন না দুলালরা

পটুয়াখালীতে দানার প্রভাব। ছবি: রাইজিংবিডি

পটুয়াখালীর লতাচাপী ইউনিয়নে দুলাল হাওলাদারের বসবাস তাহেরপুর গ্রামে। মেয়ে সালমা বেগম, নাতী ও মেয়ে জামাতা নাসির উদ্দিনকে নিয়ে থাকেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটার দিকের কথা। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায় দুলাল হাওলাদারদের গ্রামটির ওপর দিয়ে।

খুব কম সময়ের দাপট দেখায় দানা। তাতেই মুহূর্তে দুমড়ে-মুচড়ে যায় দুলালের ঘরটি। আকস্মিক এই বিপর্যয়ের মুখে জীবন বাঁচাতে তারা আশ্রয় নেয় প্রতিবেশীর ঘরে। অনটনে সংসার চালানো দুলালের পরিবার এখন চালাহীন ও দিশেহারা, কীভাবে নতুন ঘর তাও তার জানা নেই।

পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে। তবে এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। টেরিটোরিয়াল ইফেক্টের কারণে বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার সাথে ছিল বৃষ্টি।

বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে না হলেও উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বেশ খানিকটা চোখ রাঙিয়ে গেছে অতিপ্রবল দানা। এর প্রভাবে প্রাণ গেছে একজনের, গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে, ঘরবাড়ি ভেঙেছে, আহত হয়েছেন অনেকে, সবজি ও আমন ধানের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দানার প্রভাবে দুলালের ঘরটি একেবারে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মানবেতর জীবন পার করছে এই পরিবারটি। শুধু এ ঘরই নয়, ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ওই গ্রামের ১০টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় মনোয়ারা বেগম (৫০) নামের এক নারীর হাত ভেঙে যায়।
ঝড়ে উপড়ে পড়েছে জেলার কয়েক হাজার গাছপালা। ওই একই সময় জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের সাতটি বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। পা ভেঙে গেছে রুনা বেগম নামের এক নারী।

রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া এলাকার ইয়াকুব আলী হাওলাদার বলেন, তাদের হাফিজিয়া মাদ্রাসার টিনের চালা উড়ে গেছে । আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়াতলা গ্রামের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ।

তবে সব মিলিয়ে ঠিক কী পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি পুরোপুরি নিরূপণে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।

লতাচাপলী ইউনিয়নের তাহেরপুর গ্রামের দুলাল হাওলাদারের মেয়ে সালমা বেগম বলেন, ‘আমি, আমার স্বামী ও আমাদের শিশু সন্তান সবাই ঘরেই ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটি মেঘ আমাদের গ্রাম ঘিরে ফেলেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া, যা চোখের পলকে আমাদের ঘরের বারান্দা, টিনের চালা এবং টিনের বেড়া উড়িয়ে নিয়ে যায়। ঘরটি একেবারে ভেঙে যায়।’
তিনি বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে আমরা পার্শ্ববর্তী একটি ঘরে আশ্রয় নেই। আমার স্বামী একজন দিনমজুর। নতুন করে ঘর উঠানোর সাধ্য আমাদের নেই। তাই সরকারের কাছে সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি।’

একই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ইব্রাহিম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় বড় একটি চাম্বল গাছ পড়ে আমার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘরে এখন বসবাস করা যাচ্ছে না। বর্তমানে গাছের ডালগুলো সরানো হয়েছে, তবে গাছটি এখনও অপসারণ করতে পারিনি। নতুন করে ঘরের খুঁটি ও চালা লাগানো ছাড়া ঘরে বসবাস করা যাবে না।

‘সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সহযোগিতা পেলে অনেক উপকৃত হতাম,’ বলেন ইব্রাহিম।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের সহায়তার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহতি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় দানা উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল।
শুক্রবার মধ্যরাতে ঝড়টি ভারতের ওড়িশার ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ে। তবে পূর্ব সতর্কতা এবং প্রশাসনের প্রস্তুতির কারণে পশ্চিমবঙ্গে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে তথ্য দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে দানা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে যতটা ধ্বংসাত্মক ভাবা হচ্ছিল, দানা শেষপর্যন্ত ততটা রূদ্র রূপ দেখায়নি। যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরসহ একাধিক জেলায় অনেক কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষের জমিও। 

/সনি/

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়