ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাতির ঝলকে বাড়ছে ড্রাগন, ফলন তিন গুণ

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ২৬ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০৮:৫৯, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
বাতির ঝলকে বাড়ছে ড্রাগন, ফলন তিন গুণ

মতলব উত্তরে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে চাষ হচ্ছে ড্রাগন

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা রাতে শত শত বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে চাষ হচ্ছে ড্রাগন ফল। শীতের রাতে দিনের পরিবেশ সৃষ্টি করে ড্রাগন চাষের এমনই উদ্যোগ নিয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন উপজেলার সাদুল্লাপুর এলাকায় সিকোটেক্স এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার।

গত রোববার (২৪ নভেম্বর) তার গ্রামে গেলে তাকে ৩০ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করতে দেখা যায়। তার সফলতা দেখে এখন অনেকেই এ পদ্ধতিতে ড্রাগন ফল চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাতে যখন শত শত বৈদ্যুতিক বাতি একসঙ্গে জ্বলে উঠে, দূর থেকে আলোর রশ্মি নজরে আসে। দেখে মনে হয় আকাশে তারা জ্বলছে। সে এক মনোরম দৃশ্য। রাতে এই দৃশ্য দেখতে অনেকেই ছুটে আসেন ড্রাগন বাগানে।

জানা যায়, দিনের দৈর্ঘ্য কমে গেলে শীতকালে ড্রাগনের ফুল ও ফল ধরে না। মার্চ মাসের শেষে ফুল ধরে। তাপমাত্রা বাড়লে ফল বড় হয়। জুন মাস থেকে বাজারে ড্রাগন ফল উঠতে শুরু করে, যা নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ফল ধরে না।

নিজের ড্রাগন ক্ষেতে সিকোটেক্স এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার

সিকোটেক্স এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার বলেন, “আমি গত ৩ বছর আগে শখের বসে নাটোর থেকে ৬০টি ড্রাগনের চারা এনেছিলাম। দেখলাম এটাতে ভালো ফল হয়। পরবর্তীতে ইউটিউব ঘেটে টাংগাইল গিয়ে অনেক বড় বাগান দেখে আমি আরও উদ্বুদ্ধ হলাম। সেখান থেকে আরও গাছের চারা সংগ্রহ করি। গাছ লাগানোসহ পরিচর্যা পদ্ধতি ভালোভাবে জেনে আমি ২০২২ সালে নিজের জমিতে ড্রাগন বাগান তৈরি করি।”

তিনি বলেন, “২০২২ ও ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে চাষ করেছি। নওগাঁর বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার আজাদ শীতকালে ড্রাগন ফল চাষের প্রযুক্তি সংগ্রহ করে দেন আমাকে। সেপ্টেম্বর মাসে ড্রাগন ক্ষেতে লাইট বসানো শুরু করি। আপাতত চিন থেকে আনা ২ হাজার লাইট ক্ষেতে বসিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৩ ঘণ্টা ও সূর্যোদয়ের আগে আরও ৩ ঘণ্টা লাইটগুলো জ্বালানো হয়। এতে ক্ষেত দিনের আলোর মতো হয়ে যায়। লাইটিংয়ের ফলে রাতে তাপমাত্রা এবং দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ে। এ পদ্ধতির কারণে বাগানে বেশি পরিমাণ ফুল ও ফল ধরছে। বর্তমানে বাগান ফুল-ফলে ভরে গেছে।”
নাছির উদ্দীন সরকার বলেন, “নতুন পদ্ধতিতে আগের চেয়ে ৬-৭ টন বেশি ফলন হবে। প্রতিটি খুঁটিতে ৭ থেকে ৮ কেজি ফলন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি হবে। ফলের মানও ভালো হচ্ছে। গ্রীস্ম মৌসুমে ফলের দাম কম থাকে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি ড্রাগন ৮০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। বর্তমানে ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন বিক্রি করছি।”

এ বিষয়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, “শীতকালে যখন দিনের দৈর্ঘ্য কমে আসে, তখনই কৃষকরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এ কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর হয়। এ পদ্ধতিটা এখন বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি ফলটির আমদানি কমানো সম্ভব হবে।”

তিনি বলেন, “মতলব উত্তরে সিকোটেক্স এগ্রো লিমিটেড ফার্মে কৃত্রিম আলো ব্যবহার করে ড্রাগন চাষ শুরু করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, এ পদ্ধতি ব্যবহার করে স্বাভাবিকের চেয়ে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।”

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়