ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘শহীদ হোসাইনের ইচ্ছে ছিল বিদেশ যাওয়ার’

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ২৬ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৪:৫২, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
‘শহীদ হোসাইনের ইচ্ছে ছিল বিদেশ যাওয়ার’

৫ আগস্ট বানিয়াচং থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় ছোট্ট হোসাইন মিয়া।

হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ভাঙ্গারপাড়ের মো. ছানু মিয়ার ছেলে হোসাইন মিয়া (১২)। হোসাইন ছিল স্থানীয় এলআর হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। 

৫ আগস্ট বানিয়াচং থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ। এসময় একটি বুলেট এসে লাগে কিশোর হোসাইন মিয়ার কপালে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হোসাইন।

আরো পড়ুন:

“ছেলে শহিদ হয়েছে। দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছে। এটি অনেক বড় প্রাপ্তি। আল্লাহ যেন তাকে কবুল করেন”- নিজেকে এখন এভাবেই সান্ত্বনা দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হোসাইন মিয়ার মা সাজেদা আক্তার।

তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, “আমার ছেলে স্বপ্ন দেখত, আমাদেরও স্বপ্ন দেখাত। লেখাপড়া করে বড় হয়ে ইচ্ছে ছিল বিদেশ যাবে। অনেক টাকা হবে। বাবা-মায়ের দুঃখ ঘুচবে। কেউ আর তাদের আড় চোখে দেখবে না। টাকা হলে সবাই তাদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করবে। অনেকেই তাদের কাছে আসবে। ঈদে নিজেরা কোরবানিও করতে পারবে। ঘাতকের একটি বুলেট তার সব স্বপ্ন মুছে দিল।”

হোসাইন মিয়া ছিলেন ছয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। মা সাজেদা আক্তার বলেন, “আবু সাঈদের মৃত্যু যেন সে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছিল না। প্রতিদিনই তার ছোট বোনকে বলত, আমাকে গুলি কর। আমি আর বাঁচতে চাই না। আমার ছেলে চিরদিনের মতো আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেল।”

বাবা ছানু মিয়া ফেরি করে সবজি বিক্রি করেন। জেলা শহর থেকে সবজি নিয়ে পাঁচ বছর ধরে এলাকায় বিক্রি করছেন। টানাপোড়েনের সংসার।

হোসাইনের বাবা ছানু মিয়া বলেন, “আমার ছেলেকে নির্মমভাবে শহিদ করেছে ঘাতকরা। আমার ছেলের পুরো শরীর ভালো ছিল। শুধু কপাল থেকে মাথাটা শেষ করে দিয়েছে। আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি- মৃত্যুদণ্ড চাই।”

বানিয়াচং উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন ফারুক বলেন, “হোসাইন আমার প্রতিবেশী। ওইদিন যেহেতু স্বৈরশাসক পালিয়ে গেছে, তাই সবাই আনন্দ মিছিল করতে বের হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঘাতকরা ওই মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালালে প্রথম শহিদ হয় হোসাইন। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, “ওইদিন ঘাতকরা গুলি চালিয়ে হোসাইনসহ ৯ জনকে শহিদ করেছে। আমি হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। পাশাপাশি সরকারকে এসব পরিবারের পাশে থাকার অনুরোধ জানাই।”

ঢাকা/টিপু/রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়