ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

যশোরের প্রাণের মুক্তেশ্বরী নদী এখন প্রাণহীন

যশোর (অভয়নগর) সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১০:৪৩, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪
যশোরের প্রাণের মুক্তেশ্বরী নদী এখন প্রাণহীন

কচুরিপানায় ভরে থাকা মুক্তেশ্বরী

মুক্তেশ্বরী নদী যশোর শহরসহ ভবদহ অঞ্চলের ব্যাপক এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু নদীটি দীর্ঘদিন কচুরিপানাসহ অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ আর আবর্জনায় ভরে আছে নদীটি। ফলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীটি এখন মৃতপ্রায়।

এটি ভৈরবের শাখা নদী। এর দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটি যশোর জেলার চৌগাছা বাজারের তিন কি.মি. উত্তরে মর্জাতের বাওড়ের দক্ষিণপাশে ভৈরব থেকে উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থলে জলধারার চিহ্ন নাই। তবে যশোর এয়ারপোর্টের পাশে বাদিয়াতলা বিলাঞ্চল থেকে নদীর জলধারা একই জেলার সদর উপজেলা পেরিয়ে মণিরামপুরের কাশিমনগর, ঢাকুরিয়া, হরিদাসকাটি, কুলটিয়া ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে এঁকেবেঁকে অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের বারান্দী গ্রামে এসে টেকা নদীতে পতিত হয়েছে।

ভাটিতে পানি প্রবাহের মাত্রা উজানের তুলনায় অধিক। নদীটির বুকজুড়ে একসময় জোয়ার ভাটা ছিল। প্রচণ্ড ঢেউ আর খরস্রোতা ছিল। চলতো পালতোলা নৌকা। পাওয়া যেত নানা প্রজাতির দেশি বিদেশি মাছ। স্বাভাবিক নিয়মে নদী দিয়ে এলাকার ২৭টি বিলের পানির নিষ্কাশিত হতো।

প্রমত্তা এই নদীকে কেন্দ্র করে নদীর দুপাড়ে গড়ে উঠেছিল হাজার হাজার জেলে পরিবারের বসবাস। কিন্তু সেই চিরচেনা মুক্তেশ্বরী দখল-দূষণ আর কচুরিপানায় ভরে প্রাণহীণ।

কচুরিপানায় ভরে থাকা মুক্তেশ্বরী

লোনা পানি ঠেকিয়ে সবুজায়নের উদ্দেশ্যে উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে মুক্তেশ্বরীর ভাটিতে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে ভবদহে শ্রী নদীর বুকে নির্মিত হয় ২১ ভেন্টের সুইচগেট। এতে বাধাগ্রস্ত হয় মুক্তেশ্বরী নদীর জোয়ার-ভাটা। পলি জমে উঁচু হতে থাকে নদীর বুক। হারিয়ে যায় চিরচেনা ঢেউ, পালতোলা নৌকার ঝাঁক, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এর ফলে বিলগুলোতে দেখা দেয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।

সাম্প্রতিক সময়ে নদীর পাড় ধরে ভবানীপুর, ঢাকুরিয়া, হাজিরহাট, নেবুগাতি, হেলারঘাটসহ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে খরস্রোতা নদীটির কোনো পানি প্রবাহ নেই। কচুরিপানা, হেলিঞ্চা, শৈবাল, কচুগাছসহ নানারকম জলজ উদ্ভিদ আর আবর্জনায় নদীটি মৃতপ্রায়। অনেক জাগায় কচুরিপানা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ২০১৬ সালের পর নদীতে কচুরিপানা আসার পর থেকে ডিঙি নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর পানি খাবার আর গোসলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ সময় নদীর অনেকাংশ শুকিয়ে যায়। 

নদীরপাড়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন শিক্ষক সমিতাব বিশ্বাস। তিনি বলেন, “৭/৮ বছর ধরে সারা নদী শ্যাওলায় (কচুরিপানা) ভরে রয়েছে। ২০১৬ সালের আগেও নদীতে ১০ থেকে ১৫ হাত পানি ছিল। এখন সেখানে গরমকালে গোসল করার পানি থাকে না। তিনি বলেন, আশির দশকের আগে যৌবনা নদীতে পানি, ঢেউ, পালতোলা নৌকা, মাছ সব ছিল। আমাদের গ্রামের অনেকেই মাছ ধরে সংসার চালাতো। এখন নদী সে যৌবন হারিয়েছে।”
 
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতা গাজী আব্দুল গামিদ বলেন, “১৯৬২ সালে ভাটিতে শ্রীনদীর উপর ভবদহে ২১ ভেন্ট সুইচ গেট নির্মাণের পর বাধাগ্রস্ত হয় মুক্তেশ্বরীর জোয়ার-ভাটা। এতে শিবসা-হরিহর-হরি-শ্রী-টেকার মূল স্রোতধারা বন্ধ হয়ে উজানে থাকা মুক্তেশ্বরীর বুক পলি জমে উঁচু হয়ে যায়। ২০১৩ সালের পরবর্তিতে বিলে টিআরএম চালু না হওয়ায় মুক্তেশ্বরীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা।” 

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী বলেন, “পুরো মুক্তেশ্বরী নদী শ্যাওলায় (কচুরিপানা) ভরে আছে। অনেক বড় কাজ করতে গিয়ে এদিকে হাত দিতে পারিনি। বরাদ্ধ নেই। তবে মুক্তেশ্বরী আমার টার্গেটে আছে। কচুরিপানা মুক্ত করে নদীটি সংস্কারে দ্রুত হাত দিব, নদীর স্রোত ফিরাতে চেষ্টা করবো।”

ঢাকা/প্রিয়ব্রত/টিপু 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়