ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ||  মাঘ ২ ১৪৩১

খুলনায় দলীয় চাঁদাবাজিতে নয়া সংযোজন ‘কুপন’

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৫, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ২১:০০, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
খুলনায় দলীয় চাঁদাবাজিতে নয়া সংযোজন ‘কুপন’

খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ‘বাংলাদেশ উৎসব’ নাম দিয়ে ছাপানো কুপন

খুলনায় রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজিতে নয়া সংযোজন হয়েছে কুপন। ফ্রিজ, টিভিসহ ৪৫টি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করা হচ্ছে এ কুপন। 

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে ঘিরে খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ‘বাংলাদেশ উৎসব’ নাম দিয়ে নয়া চাঁদাবাজির এ আয়োজন করেছে স্থানীয় বিএনপি। 

এ উৎসবের খরচ জোগাতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে কুপনে। ৩০ টাকা মূল্যের এই কুপন ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামে গ্রামে। 

এভাবে কুপন ছাপিয়ে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ খুলনা বিএনপিতে এবারই প্রথম। অতীতে কোনো রাজনৈতিক দলকে এসব করতে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। 

কুপনের ওপরে ছোট করে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছবি। বাঁ পাশে বড় করে তারেক রহমানের ছবি দেওয়া রয়েছে। পাশে লেখা ‘দেশনায়ক তারেক রহমানের আহ্বানে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ উৎসব কুপন-২০২৪’। পাশে ইংরেজিতে লেখা ‘তুমি জিততে পার ফ্রিজ, এলইডি টিভিসহ ৪৫ পুরস্কার’। নিচে বিএনপির লোগো ও ফুলতলা উপজেলা বিএনপির নাম লেখা।

কুপন ছাপিয়ে অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে ফুলতলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল বাশার বলেন, “১৬ ডিসেম্বর শোভাযাত্রা, সমাবেশ ও ঢাকার শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ উৎসব’। বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। উৎসবে শুধু দলের সদস্যের জন্য র‍্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন ও কুপন তৈরি করা হয়েছে।” 

ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনির হাসান টিটো জানান, দলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে আনন্দ করার জন্য র‍্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন করেছে। মাত্র তিন হাজার কুপন ছাপানো হয়েছে। এতে ৯০ হাজার টাকার মতো উঠবে। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কার কেনা হবে।

তবে এলাকায় খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। ফুলতলা উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে আটরা-গিলাতলা ইউনিয়ন কমিটি মহানগর বিএনপির অধিভুক্ত। অন্য তিন ইউনিয়নের প্রতিটিতে রয়েছে ৯টি করে ওয়ার্ড। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০০ করে কুপন পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৯ হাজার কুপন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনেও কুপন পাঠানো হয়েছে। তবে কত হাজার কুপন ছাপানো হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। 

ফুলতলার দামোদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জামাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “ইউনিয়নে মোট তিন হাজার কুপন দিয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০০ করে কুপন পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছে, দলের লোকেরাই অগ্রাধিকার পাবে, না হলে বাইরেও বিক্রি করা যাবে।” 

জামিরা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, ‘‘আমার ইউনিয়ন ২ হাজার ৭০০ কুপন পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩০০ করে পাঠিয়ে দিয়েছি। গ্রামে দলের এত লোক আসবে কোথা থেকে? বাইরের লোকেরাও কিনবে, যদি লাইগা যায়!’’

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও উপজেলা বিএনপির কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক জেলা সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘‘১৯৭৮ সাল থেকে বিএনপি করি কিন্তু এমন আয়োজন দেখিনি। যেহেতু তারা স্বতন্ত্র ইউনিট, আমার কিছু বলার নেই। আশা করি, সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’’ 

প্রসঙ্গত, বর্তমানে খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি নেই। বেশ কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় কমিটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত করেছিল।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/সনি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়