ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পায়রায় জাহাজে কাটা পড়ছে জাল-দড়ি, নিঃস্ব হচ্ছে জেলেরা

ইমরান হোসেন, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ৪ মার্চ ২০২৫  
পায়রায় জাহাজে কাটা পড়ছে জাল-দড়ি, নিঃস্ব হচ্ছে জেলেরা

কয়লার জাহাজে শত শত জেলের জাল-দড়ি কাটা পড়েছে

বরগুনার পায়রা নদীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার জাহাজে কাটা পড়ছে শত শত জেলের জাল-দড়ি। এতে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে অন্তত ৬ শতাধিক জেলে। জেলেরা বলছেন, নৌ সীমানায় নির্দিষ্ট চ্যানেল না থাকায় সুবিধামতো জাহাজ চালিয়ে জাল-দড়ি কাটছে জেলেদের। তবে জেলেদের দ্বারা হামলার শিকারের দাবি করেছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে বরগুনার তালতলীর তেঁতুল বাড়িয়া এলাকার জয়নাল মৃধা পাঁচ জেলেসহ মাছ শিকার করছিলেন পায়রা নদীতে। এ সময় তালতলীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা বোঝাই ১৬টি জাহাজ এসে লণ্ডভণ্ড করে ফেলে জয়নাল মৃধার জাল-দড়ি। পরে ধারদেনা করে ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে জাল-দড়ি মেরামত করে ১৩ দিন পর ২২ ফেব্রুয়ারি ফের পায়রা নদীতে মাছ শিকারে যান তিনি। ওই দিন ভোর রাতে আবারো তালতলীর খোট্টারচরে নির্মিত ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা বোঝাই জাহাজে লণ্ডভণ্ড করে ফেলে জয়নাল মৃধার জাল-দড়ি।

আরো পড়ুন:

জয়নাল মৃধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘এখন আমি ধারদেনায় ডুবে গেছি। আমিসহ পাঁচটি পরিবার এই জাল-দড়ির উপর নির্ভর করে। আমরা এখন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি আর জাল-দড়ি নিজেরাই মেরামত করছি। কারণ এখন আর জাল-দড়ি মেরামত করার পেশাদার শ্রমিক ভাড়া করার সামর্থ্য আমার নেই।’’

তার অভিযোগ এবারই প্রথম নয়, গত দেড় বছর ধরে এমনভাবে বার বার জাল-দড়ি কাটা পড়ছে কয়লার জাহাজে। জেলেদের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে পায়রা অন্তত ৫০ কিলোমিটার এলাকায় ৬ শতাধিক জেলের জাল-দড়ি কাটা পড়েছে কয়লা‌র জাহাজে। বার বার জাল-দড়ি কাটা পড়ায় ঋণের বোঝায় অসহায় হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের জেলেরা।

জয়াল ভাংগা এলাকার জেলে জাহিদ হোসেন, মোস্তাফিজ, খবির মোল্লা, নিলু মাঝিসহ এ এলাকার সকল জেলে এখন ব্যস্ত কয়লার জাহাজে কাটা পড়া জাল-দড়ি মেরামত করতে। নৌরুটে জাহাজ চলাচলে নির্দিষ্ট চ্যানেলের দাবি তুলেছেন তারা। 

জেলেরা জানান, কয়লা বোঝাই জাহাজে জাল-দড়ি কাটা পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এই এলাকার জেলেরা।

নিলু মাঝি রাইজিংবিডি-কে জানান, এমনিতেই নদীতে ইলিশসহ সব মাছ কম ধরা পড়ে। তারপর আবার দেড় বছর ধরে কয়লার জাহাজে কাটা পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। জেলেদের এই লোকসানের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন তিনি।

জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ থাকায় প্রভাব পড়েছে উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়। জয়াল ভাংগা এলাকার মাছের আড়ৎদার সেলিম মাঝি জানান, এই এলাকার জেলেরা মাছ ধরতে না পারায় অলস সময় কাটছে তালতলীর আড়ৎদার-পাইকারদের। কর্মহীন হয়ে পড়েছে মৎস্য শ্রমিকরা।

এমন ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন কয়লা নিয়ে আসা জাহাজ চালকরাও। সামিরা-১ জাহাজের সেকেন্ড ক্যাপ্টেন ইউসুফ আলী জাল-দড়ি কাটার বিষয়টি স্বীকার করলেও তার দাবি পায়রায় আসলে তাদের উপর হামলা করে জেলেরা।

পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সদস্য ও সিনিয়র সাংবাদিক আরিফ রহমান বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে অযোগ্য স্থানে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কুফলে ভুগছে জেলেরা। ঘনবসতিপূর্ণ জেলে পল্লীতে ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তৎকালীন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বরিশাল ইলেকট্রিফেকশন কোম্পানি এ কাজটি করেছে। এখন প্রতিদিন জেলেদের জাল-দড়ি কাটা পড়ে পথে বসছেন তারা। 

তিনি জানান, ইলিশের প্রজননের অন্যতম স্থান পায়রা নদী। কিন্তু সেই নদীতে এভাবে কয়লার জাহাজ আসা-যাওয়া করলে ইলিশের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তবে নির্দিষ্ট নৌরুট সৃষ্টির আগে জেলেদের সমস্যা নিরসনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংলাপের কথা জানালেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন। তিনি আরো বলেন, ‘‘জেলেদের মাছ শিকারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা করবো।’’

জাহাজে কাটা পড়ে চলতি বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকার জাল-দড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি জেলেদের।

ঢাকা/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়