ঢাকা     শুক্রবার   ১৩ জুন ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩০ ১৪৩২

ধানের বাম্পার ফলনে ঈদ আনন্দ হাওর পাড়ের কৃষকের ঘরে

মনোয়ার চৌধুরী, সুনামগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ৬ মে ২০২৫   আপডেট: ১৬:০৬, ৬ মে ২০২৫
ধানের বাম্পার ফলনে ঈদ আনন্দ হাওর পাড়ের কৃষকের ঘরে

হাওরে ধান কাটায় ব্যস্ত কয়েকজন কৃষক

‘বোরো ধানের ভান্ডার’ খ্যাত জেলা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ ধান দিয়েই স্বপ্ন বুনেন সারা বছরের। হাওর পাড়ের মানুষদের সংসারের খরচ, সন্তানদের পড়ালেখা, বিয়ে-শাদি, ঈদ-পূজাসহ সব কিছুই নির্ভর করে ধানের ওপর। বছরে একবার বৈশাখী ধান গোলায় তুলতে পাড়লে সারা বছর হাসি থাকে কৃষকদের মুখে।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুনামগঞ্জের বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গোলায় ধান তুলতে শুরু করা কৃষকদের পরিবারে তাই ঈদ আনন্দ চলছে।

হাওরের কৃষকরা ইতোমধ্যে ধান কাটা, শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। শুধু কৃষকরা নন, তাদের সহযোগিতা করছেন পরিবারের সদস্যরাও। সামর্থ্যবান কৃষকরা এই কাজে শ্রমিকদের ভাড়া করেছেন। ধান কাটার কাজে ব্যবহার হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার।

আরো পড়ুন:

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার ধানে রোগ কিংবা পোকার আক্রমণ হয়নি। বৈশাখ মাস শেষ হওয়ার আগেই হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা। এবার জেলার হাওরগুলোতে ধান কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় দেড় লাখ কৃষি শ্রমিক ও কৃষক। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরাও কাজ করছেন। জেলার হাওরগুলোতে ধান কাটছে ১ হাজার ৩৫টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ১২০টি রিপার মেশিন।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ১২টি উপজেলার মোট ১৩৭টি হাওরের ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০ মেট্রিক টন ধান। যা থেকে চাল উৎপাদন হবে ৯ লাখ ২১ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন।

কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটছেন এক কৃষক


জেলার জলভাঙা হাওরের কৃষক আব্দুল মালিক রাইজিংবিডি-কে বলেন, “এই বছর সোনার ফসল উঠেছে, যেটাকে আমরা সোনার বৈশাখী বলি। তবে খরায় কিছু ধান যদি নষ্ট না হতো কৃষকরা আরো ৫ মণ বেশি ধান পেতেন। এবার ধানের যা উৎপাদন তাতে আমরা সত্যি খুব আনন্দিত। পরিবারে সবাই ঈদ আনন্দে মেতেছেন। সব ঠিক থাকালে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারব।”

অমৃত বিশ্বাস নাম এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা ধান বিক্রি করে পড়ালেখা করি, স্কুলের খরচ দেই, বাজার-হাট করি। এই বৈশাখী ধান দিয়েই আমাদের সংসার চলে। বৈশাখী আমাদের সম্পদ।”

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষক মোহাম্মদ ঝুমন মিয়া বলেন, “আল্লাহের রহমতে ধান খুবই ভালো হয়েছে। অন্য বছর তো পানি, শিলাবৃষ্টিতে ধান নষ্ট হয়ে যেত। এবার কোনো সমস্যা হয়নি। আল্লাহ রহমতে এবার সব ধান ঘরে তুলতে পারব।”

হাওরের কৃষক মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, “এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি কিয়ারে ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এবার মোটামুটি চলতে পারব।” 

মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন শ্রমিকরা 


ধানের দাম বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বছর ধানের ক্ষেতে খরচ বেশি হয়েছে। কিয়ার প্রতি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা লেগেছে। সাত হাজার টাকা খরচ করে ১৫ মণ ধান পেয়ে কৃষক লাভবান হয় না, ফলে সরকারের প্রতি অনুরোধ অন্তত ধানের মণ যেনো ১৫০০-১৬০০ টাকা করা হয়। তাহলে কৃষক বাঁচবে।” 

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, “সুনামগঞ্জ জেলায় আমাদের এবারের লক্ষ্যমাত্রার পুরোটাই অর্জিত হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ও আল্লাহের রহম থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আমরা আশা করছি, সুনামগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত ধানের মূল্য দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। কৃষকরা ধান বিক্রি করে স্বচ্ছল হবেন।”

কৃষকরা ধানের সরকারি দাম নিয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, “সরকার নির্ধারিত ধানের মূল্য হলো প্রতি মণ ১৪৪০টাকা। কৃষকদের আহ্বান জানাচ্ছি, সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার জন্য। সরকার যখন নির্ধারিত মূল্য ঘোষণা করে, তখন স্বাভাবিকভাবে ধানের দাম একটু বেড়ে যায়, এতে কৃষকরা খুব লাভবান হন।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়