ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ১০ নভেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৯:২০, ১০ নভেম্বর ২০২৫
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি

টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি জলাভূমি এবং অন্যতম সংবেদনশীল জলজ বাস্তুতন্ত্র। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও নৌচলাচল, অবৈধ বালু উত্তোলন, নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবহার, জলজ বন ধ্বংস, অতিরিক্ত বালাইনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং বর্জ্য নিঃসরণসহ পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় ‘টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ’ জারি করেছে সরকার।

সোমবার (১০ নভেম্বর) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩-এর ধারা ২২ ও ২৭ অনুযায়ী প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ জারি করা হলো।

টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওরের জন্য প্রতিপালনীয় নির্দেশনাসমূহ:
১. হাওর অঞ্চলে পাখি বা পরিযায়ী পাখি শিকার, পরিযায়ী পাখি সমৃদ্ধ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন, গাছ কাটা এবং হাওরের জলজ বনের কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
২. হাওরের জলজ গাছ (হিজল, করচ ইত্যাদি) কেটে ঘের নির্মাণ বা মাছের আশ্রয়ের কাঁটা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
৩. পর্যটক বা হাউসবোট জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর বা হাওর অধিদপ্তর কর্তৃক চিহ্নিত অভয়াশ্রম বা সংরক্ষিত এলাকা—যেমন পাখি, মাছসহ জলজ প্রাণীর আবাসস্থল, প্রজননকেন্দ্র বা বন্যপ্রাণীর চলাচলের স্থান—এ প্রবেশ করতে পারবে না।
৪. সরকারের অনুমতি ছাড়া উল্লিখিত হাওর এবং এর ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
৫. পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন ছাড়া এবং সরকারের অনুমতি ব্যতীত হাওরের জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত করা যাবে না।

৬. হাওর এলাকায় ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না।
৭. শিক্ষা সফর ও বিদেশি পর্যটক পরিবহনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।
৮. অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী যাত্রীসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। কোনো হাউসবোট বা নৌযান নির্ধারিত যাত্রীর বেশি যাত্রী পরিবহন কিংবা মাছ ধরার যন্ত্রপাতি বহন করতে পারবে না। নির্ধারিত রুট ছাড়া নৌযান চলাচল ও নোঙর করাও নিষিদ্ধ।
৯. দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটক পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। আকস্মিক ঝড়, প্রবল বৃষ্টিপাত বা বজ্রপাতের আশঙ্কাকালে পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকদের স্থানীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
১১. হাউসবোট বা নৌযানে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও কোনো ধরনের পার্টি আয়োজন করা যাবে না।
১২. হাউসবোট বা নৌযানের মালিক এবং ট্যুর অপারেটরদের শব্দদূষণ রোধে উচ্চ আওয়াজ সৃষ্টিকারী ইঞ্জিন বা জেনারেটর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

১৩. হাউসবোট বা নৌযানে একবার ব্যবহারযোগ্য (সিঙ্গেল-ইউজ) প্লাস্টিক বহন করা যাবে না।
১৪. নিষিদ্ধ জাল বা বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে হাওরে মাছ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১৫. যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া হাওরে বালু, পাথর বা মাটি ইজারা দেওয়া বা উত্তোলন করা যাবে না।
১৬. শুষ্ক মৌসুমে হাওরের কোনো জলাধারের পানি সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষ করা যাবে না।
১৭. ট্যুর অপারেটররা ১০০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের নৌযান বা হাউসবোট পরিচালনা করতে পারবে না।
১৮. হাওরসংলগ্ন বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য স্থাপনা থেকে তরল ও কঠিন বর্জ্য হাওরে নিঃসরণ করা নিষিদ্ধ।
১৯. হাওর অঞ্চলে পাকা সড়ক নির্মাণ পরিহার করতে হবে। তবে বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে এবং নির্মাণকাজ শুরু করার আগে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন সম্পন্ন করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সুরক্ষা আদেশ প্রতিপালন বাধ্যতামূলক। এ আদেশ লঙ্ঘন করলে তা বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়