ঘুমন্ত সোহাগীর নিষ্প্রাণ দেহ মিলল বড়াল নদের পাড়ে
পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
শিশু সোহাগীর মৃত্যুতে আহাজারি থামছে না মা শ্রাবন্তী মন্ডলের। শনিবার দুপুরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা মন্ডলপাড়া গ্রামে
পাঁচ মাস বয়সী সোহাগীকে ঘুম পাড়িয়ে বিছানায় শুইয়ে রেখে ঘরের কাজ করছিলেন মা শ্রাবন্তী মন্ডল। এক পর্যায়ে খড় আনতে বাইরে যান তিনি। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে দেখেন, বিছানা খালি। শুরু হয় সোহাগীর সন্ধান।
এলাকাবাসীও পরিবারের সঙ্গে যোগ দেয় শিশুটিকে খুঁজতে। কিছু সময় পর তারা বাড়ির অদূরে বড়াল নদের পাড় থেকে উদ্ধার করেন শিশু সোহাগীর নিষ্প্রাণ দেহ।
শনিবার (৩১ মে) সকালে এমনই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় শিশুটির পরিবারে চলছে আহাজারি।
সবার মনে প্রশ্ন কে নিয়ে গেল ঘুমন্ত সোহাগীকে? কি এমন রহস্য আছে শিশুটির মৃত্যুর পেছনে? কার শত্রুতার বলি হলো পাঁচ মাস বয়সী এই শিশু?
মারা যাওয়া সোহাগী চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের জালেশ্বর মন্ডলপাড়া গ্রামের কমল মন্ডল ও শ্রাবন্তী মন্ডল দম্পতির মেয়ে।
পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সকালে সোহাগীকে কখনো ঘরের বারান্দার বিছানায়, কখনো দোলনায় শুইয়ে রেখে সংসারের কাজ করেন মা শ্রাবন্তী মন্ডল। প্রতিদিনের মতো আজ সকাল ৭টার দিকে ঘুমন্ত সোহাগীকে ঘরের বারান্দার বিছানায় শুইয়ে রেখে গরুর জন্য খড় আনতে যান তিনি।
কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে তিনি দেখেন সোহাগী বিছানায় নেই। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। বাড়ির অদূরে বড়াল নদের পাড়ে সোহাগীর নিষ্প্রাণ দেহ দেখতে পান এলাকাবাসী। পরিবারের লোকজন তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যান। পুলিশকে খবর দেন এলাকাবাসী।
শনিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র মেয়ে সোহাগীর কথা বলতে বলতে প্রায়ই মূর্ছা যাচ্ছেন মা শ্রাবন্তী মন্ডল। মেয়ে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা কমল মন্ডল। এলাকার মানুষ ভিড় করেছেন বাড়িতে। আত্মীয়-স্বজন সোহাগীর বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।
ঘরের বারান্দায় ঝোলানো রয়েছে দোলনা। যেখানে সোহাগীকে শুইয়ে রেখে সংসারের কাজ করতেন মা। সেই দোলনা দেখে শ্রাবন্তী মন্ডল বলেন, “এই দোলনায় এখন কে ঘুমাবে? আপনারা আমার সোহাগীকে এনে দেন।”
সোহাগীর বাবা কমল মন্ডলের দাবি, “মেয়ের এই মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়। কেউ তাদের ঘর থেকেই শিশুকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে নদীর পাড়ে ফেলে রেখেছিল।” তিনি দ্রুত দোষীকে খুঁজে বের করার দাবি জানান।
চাটমোহর থানার ওসি মনজুরুল আলম বলেন, “পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। শিশুটির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ