সেই দুলু ইংরেজিতে ফেল
নাটোর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
দেলোয়ার হোসেন দুলু
বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন নাটোরের বাগাতিপাড়ার ইউপি সদস্য ৫২ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেন দুলু। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার ৩৫ বছর পর পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফল প্রকাশ হলে জানা যায়, ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন দুলু।
দেলোয়ার হোসেন দুলু বলেছেন, “আমার পরিবারের সবাই শিক্ষিত। শুধু আমিই পিছিয়ে ছিলাম। এটাই আমাকে কুরে কুরে খেত। একবার না পারিলে দেখো শতবার—এবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু হলো না। পরেরবার আরো ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে ইংরেজিতে পাস করেই ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ।”
দেলোয়ার হোসেন দুলু বর্তমানে বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রাথমিক বৃত্তি এবং ১৯৮৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে জামনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জুনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। এরপর ১৯৯০ সালে বাগাতিপাড়া কেন্দ্রে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহরাব হোসেনের নির্দেশে তিনি বহিষ্কৃত হন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। সেখানেই তার শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে।
২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনে জয়লাভ করলে ফিরে পান আত্মবিশ্বাস। দুলু সিদ্ধান্ত নেন, জীবনের অপূর্ণ অধ্যায়টি শেষ করতেই হবে।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উমরগাড়ী দারুল খায়ের দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন দুলু। নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিয়ে ২০২৫ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন। সে সময় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী বলেছেন, “এই বয়সে বই-খাতা নিয়ে আবার বসা, পরীক্ষা দেওয়া, এটা সাহসের পরিচয়। দুলু ভাই দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়। দেলোয়ার হোসেন দুলুর এই প্রচেষ্টা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নতুন করে শুরু করা সম্ভব, যদি মন থেকে চাওয়া হয়। ইংরেজিতে ফেল করলেও তার এই প্রয়াস শত মানুষকে প্রেরণা যোগাবে।”
ঢাকা/আরিফুল/রফিক