ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কোটি টাকার ট্রমা সেন্টারে নেই সেবা

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১০:৪৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কোটি টাকার ট্রমা সেন্টারে নেই সেবা

২০২২ সালের নভেম্বরে এই ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধন করা হলেও জনবল নিয়োগ হয়নি

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কোল ঘেষেঁ সন্যাসীরচরে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক ট্রমা সেন্টার। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় আড়াই বছর আগে নির্মিত সেন্টারটিতে একাধিক ভবন থাকলেও এখনো চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি এখন মাদকের আস্তানায় পরিণত হয়েছে, প্রতিদিন চুরি হচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। 

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি রীতিমতো মহামারি রূপ নিয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করা গেলে প্রাণহানি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব, এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই নির্মিত হয়েছিল শিবচরে ট্রমা সেন্টারটি।

আরো পড়ুন:

হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে ২২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০৯ জন নিহত হয়েছেন।

এলাকাবাসী জানান, সন্যাসীরচর ইউনিয়নের ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কের কোল ঘেঁষেই নির্মাণ করা ট্রমা সেন্টারের নামকরণ করা হয় জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর নামে। ২০২২ সালের নভেম্বরে সেন্টারটি উদ্বোধন করা হয়। এখন মাদকসেবীদের আড্ডা বসে এখানে। রাতে পুরো ট্রমা সেন্টার অরক্ষিত থাকে। কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা এই হাসপাতাল আলোর মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি ট্রমা সেন্টারে সাতজন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), তিনজন অর্থোপেডিকস সার্জন, দুইজন অ্যানেসথেটিস্ট, দুইজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্স এবং ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রমা সেন্টারের মূল ফটক খোলা। ভবনের ভেতরেও প্রবেশ করা যাচ্ছে অনায়াসে। সম্প্রতি সেখান থেকে এসি, ফ্রিজ, টেলিভিশন, সেনেটারির মালামাল, পানির মোটরসহ বিভিন্ন জিনিস চুরি হয়েছে। সন্ধ্যার পর এখানে মাদকসেবনকারীদের আড্ডা বসে।

আব্দুল আল ইসলাম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “হাসপাতালটি উদ্বোধন হয়েছে আড়াই বছর হলো। এখনো ট্রমা সেন্টারটি চালু হয়নি। আগে হঠাৎ হঠাৎ কর্মকর্তারা আসতেন। এরপর থেকে জনশূন্য এই সেন্টার। ট্রমা সেন্টারটিতে এখন রক্ষণাবেক্ষণের লোকজন নেই। মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে প্রতিদিন। আমরা দ্রুত হাসপাতাল চালুর দাবি জানাই।”

গাড়ি চালক আবুল খায়ের বলেন, “ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কে ট্রমা সেন্টার থাকা অত্যাবশ্যক বলে মনে করি। কারণ রাস্তায় যখন-তখন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রমা সেন্টার থাকলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।”

মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শরীফুল আবেদীন কমল বলেন, “শিবচরের ট্রমা সেন্টারটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। আমি শুনেছি, ওখানকার কিছু জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। ট্রমা সেন্টারটি চালু না হবার পেছনে রয়েছে জনবল সংকট।” 

তিনি বলেন, “আমরা হাসপাতালটি হস্তান্তর পেয়েছি। এটি পরিচালনা করতে যে জনবল প্রয়োজন তা পাইনি। আমরা কর্তৃপক্ষকে চাহিদা দিয়ে রেখেছি। আশা করছি, শিগগিরি জনবল পাওয়ার মাধ্যমে আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়