গ্লোবাল পার্টনারশিপে নোবিপ্রবি; বছরে বিদেশি ২১ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, শিক্ষা ও গবেষণায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে গত ১ বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল কোলাবোরেশন অ্যান্ড এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স (আইসিইএ) অফিসের উদ্যোগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তুরস্ক, জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশের ২১টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এসব চুক্তি নোবিপ্রবির বৈশ্বিক র্যাঙ্কিং উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্প্রসারণ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী মবিলিটি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আইসিইএ সূত্র জানায়, গত এক বছরে স্বাক্ষরিত এমওইউগুলোর মধ্যে অন্তত ১০টি তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে, যেগুলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন–সমর্থিত ‘ইরাসমাস প্লাস’ প্রোগ্রামের অংশ। এসব চুক্তির আওতায় নোবিপ্রবির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা ইউরোপীয় তহবিল থেকে বৃত্তি, ভ্রমণ ব্যয়, থাকা–খাওয়া এবং শিক্ষণ–প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন। এ বছরই ইরাসমাস প্লাসের আওতায় ১৯ জন শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও শিক্ষক নানামুখী এক্সচেঞ্জ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন।
এ বছর নোবিপ্রবি থেকে ৩জন শিক্ষার্থী তুরস্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ সেমিস্টারের জন্য ইরাসমাস স্কলারশিপে অধ্যয়ন করছেন। তাদের প্রত্যেকেই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৪০০ ইউরো পর্যন্ত টিউশন ফি ও উপবৃত্তির সুযোগ পেয়েছেন।
অন্য দিকে, ৮ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা শিক্ষাদান ও নন-টিচিং প্রশিক্ষণে তুরস্ক সফর করেছেন। একই সময়ে তুরস্কের ৩ জন অধ্যাপক নোবিপ্রবি সফর করে যৌথ গবেষণা, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং ভবিষ্যৎ একাডেমিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
ইরাসমাস পার্টনার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে আডিয়ামান বিশ্ববিদ্যালয়, আনাদোলু বিশ্ববিদ্যালয়, সাকারিয়া ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস, রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, ফিরাত বিশ্ববিদ্যালয়, আলানিয়া আলাউদ্দিন কাইকুবাত বিশ্ববিদ্যালয়, আঙ্কারা ইলদিরিম বেয়াজিত বিশ্ববিদ্যালয়, আমাসিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ইস্তাম্বুল কুলতুর বিশ্ববিদ্যালয়।
ইরাসমাসের বাইরে তুরস্কের নিগদে ওমের হালদিসমের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুর্কি ইন্টারন্যাশনাল এক্সচেঞ্জ স্কলারশিপ (TIES) চুক্তির আওতায় নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি, উপবৃত্তি ও যাতায়াত খরচ পাচ্ছেন।
অন্য দিকে, জাপানের কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে স্বাক্ষরিত IJEP প্রোগ্রামের অধীনে জাপানের বিখ্যাত জেসো স্কলাশীপের আওতায় শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছেন, যেখানে প্রতি মাসে ৮০ হাজার ইয়েন বৃত্তি দেওয়া হয়। বর্তমানে নোবিপ্রবির ৫ জন শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়নরত।
ইরাসমাস বা বৃত্তিভিত্তিক নয় এমন কয়েকটি এমওইউ–এর অধীনে শিক্ষার্থী–শিক্ষকরা নিজ খরচে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। আইসিইএ অফিস জানায়, এসব কার্যক্রম পুরোপুরি তহবিল অনুমোদন এবং অংশীদার বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন নীতির ওপর নির্ভরশীল। তহবিল চূড়ান্ত হলে অংশীদার বিশ্ববিদ্যালয় নোবিপ্রবিকে মনোনীত তালিকা পাঠায় এবং এরপর আইসিইএ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক স্টেকহোল্ডার মনে করেন, এসব আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নোবিপ্রবির বিদেশি অংশীদারিত্ব, গবেষণা দৃশ্যমানতা এবং গ্লোবাল উন্নয়নে বাস্তবসম্মত ভূমিকা রাখছে।
আইসিইএ পরিচালক ও নোবিপ্রবি উপ- উপচার্য ড. মোহাম্মদ রেজুয়ানুল হক বলেন, "দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমরা অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এগ্রিমেন্ট করেছি, আরো অনেকগুলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তির কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা শুধু বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে না বরং গবেষণায় উন্নয়নের জন্য দেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও এগ্রিমেন্ট করছি। খুব শীঘ্রই আরো চুক্তি হবে। আশা করি, ভবিষ্যতে এসব আরো বাড়বে। ফলে শিক্ষার্থীরা গবেষণায় উন্নয়নের সুযোগ পাবে।"
গ্লোবাল পার্টনারশিপ আরো বাড়ানোর প্রত্যয় ব্যাক্ত করে উপচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, " আমরা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য কাজ করে যেতে চাই। ইউরোপের দিকের আরো বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি করতে চাই। সেই সাথে আমেরিকা, জাপান, মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে ইন্টারন্যাশনাল পার্টনারশিপ ও কোলাবরেশন বাড়াতে চাই। এর ফলে শিক্ষার মান বাড়বে, গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি হবে ও বেশি বেশি ল্যাব তৈরি করতে পারবো।"
ঢাকা/শফিউল্লাহ/জান্নাত