আ.লীগ নেতার হিমাগারে নির্যাতন, মামলা তুলতে হুমকির অভিযোগ
রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
কিশোরী, নারী ও এক তরুণকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতার হিমাগারে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। মঙ্গলবারের ছবি
রাজশাহীর পবার বায়া এলাকায় হিমাগারে আটকে তিনজনকে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বাদী নিরাপত্তা চেয়ে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে রাজশাহীর এয়ারপোর্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক হোসেন শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে বলেন, “নির্যাতনের মামলাটি যে এসআই তদন্ত করছেন, তাকেই জিডিটি তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। বাদীর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।”
আরো পড়ুন: শরীরে সেফটি পিন ফুটিয়ে কিশোরী-নারীসহ ৩ জনকে নির্যাতনের অভিযোগ
জিডিতে বাদী উল্লেখ করেন, হিমাগারে তিনজনকে নির্যাতনের ঘটনায় গত ৭ অক্টোবর তিনি বাদী হয়ে এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করেন। নির্যাতনের শিকার তিনজনকে দেখতে গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান। বাড়ি ফিরে শোনেন, হেলমেট পরিহিত এক ব্যক্তি তাকে বাড়িতে খুঁজতে গিয়েছিলেন।
ওই ব্যক্তি তাকে না পেয়ে তার নানিকে বলে আসেন, তিনি যে মামলা করেছেন তা তুলে নিতে হবে। তা না হলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। নানি যেন বাদীকে এ কথা জানিয়ে দেন।
হুমকি দেওয়া ব্যক্তি বাদীর নানিকে আরো জানিয়ে যান, তার আরো নাতি আছে। তারা সবাইকেই চেনেন। মামলা না তুললে তাদেরও ক্ষতি হবে।
মামলার বাদী বলেন, “ঘটনার দিন বিকেলেই যে মামলা রেকর্ড হওয়ার কথা, সেটা রেকর্ড করতে পুলিশ রাত ৯টা বাজিয়ে দেয়। লম্বা এই সময়ে আসামিপক্ষ লোক পাঠিয়ে আমাদের মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন মামলা না করার জন্য। পুলিশই মামলা রেকর্ড করতে বিলম্ব করে তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছিল। আমরা টাকার কাছে বিক্রি না হয়ে মামলা করেছি। এখন মামলা তুলে নিতে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
গত মঙ্গলবার সকালে পবা উপজেলার বায়া এলাকায় রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সরকারের হিমাগারে ডেকে নিয়ে এক তরুণ (২৭), এক নারী (৩০) ও এক কিশোরীকে (১৩) মারধরের পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন স্থানে সেফটি পিন ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাদের মধ্যে ওই তরুণ একটি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভাগী নারী ও কিশোরী তার খালাতো বোন।
অভিযোগ উঠেছে, মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে আহসান উদ্দিন সরকার জিকো (৪৫), মেয়ে আঁখি (৩৫) ও হাবিবা (৪০) এ ঘটনায় সম্পৃক্ত। তাদের গ্রেপ্তার করে থানায় নেয় পুলিশ। পরদিন তারা আদালত থেকে জামিন পান।
বাদীর অভিযোগ, “পুলিশ দুর্বল ধারা দিয়ে মামলা রেকর্ড করেছে। তাই তারা জামিন পেয়েছেন। আসামিদের মধ্যে দুই বোন হাবিবা ও আঁখি দেশের বাইরে থাকেন।” জামিন পাওয়ায় অভিযুক্ত দুই বোন পালিয়ে যেতে পারেন বলে শঙ্কা করছেন বাদী। এ জন্য তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করবেন যেন আসামিরা দেশত্যাগ করতে না পারেন।
বাদীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মামলার আসামি আহসান উদ্দিন সরকার জিকোকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ