আমির হামজার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান ফয়জুল হাকিমের
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী মুফতি আমির হামজার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বক্তব্যর কঠোর সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই বিবৃতি পোস্ট করা হয়।
প্রয়াত চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট বদরুদ্দীন উমরের বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে উদ্ধৃত করে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মুফতি আমির হামজা রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
এর আগে সকালে কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বরে জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মুফতি আমির হামজা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বেফাঁস মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সেখানে আমির হামজা বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৯৭১ সালের যে ভূমিকা, তা নিয়ে এতদিন পর্যন্ত মিথ্যা রচনা করা হয়েছে। আপনারা বদরুদ্দীন উমরের ইতিহাস পড়বেন। তার লিখিত বইতে আমরা পড়েছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব কল্পকাহিনী লেখা, এগুলো ১০০ ভাগের ৯০ ভাগ মিথ্যা। জামায়াত ইসলামী ওই সময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল না, তারা ছিল ভারতের বিরুদ্ধে। এখন আমরা এটা জেনেছি। এতদিন আমাদের এই সত্য জানতে দেওয়া হয়নি।”
এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে ফয়জুল হাকিম বলেছেন , “১৯৭১ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন সামরিক শাসনের অধীনস্থ মালেক মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য ছিল জামায়েতে ইসলামী। এ সময় জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা ছিল পাকিস্থানি হানাদার সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঙালি নিধন ও গণহত্যার প্রধান সহযোগী হওয়া। সরাসরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া।”
“অন্যদিকে ১৯৭১-এ পাকিস্থানি হানাদার সেনাবাহিনী ও তার এদেশীয় সহযোগী রাজাকার-আলবদর-আল শামসের বিরুদ্ধে দেশের ভিতরে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পূর্ব বাঙলার মুক্তিকামী জনগণ, ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সেনা অফিসার ও সৈনিকেরা, আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট বিপ্লবী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গ্রুপের সদস্য-সমর্থকেরা,” বলেন ফয়জুল হাকিম।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “২০২৪-এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন উচ্ছেদ করেছে। একই সঙ্গে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের মিথ্যা বয়ান উচ্ছেদ হতে চলেছে। এই সুযোগে জামায়াতে ইসলামী দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে নিজেদের অতীত গণবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা, বিশেষত ১৯৭১-এর গণহত্যায় সহযোগী ভূমিকাকে আড়াল করতে মাঠে নেমেছে।”
ফয়জুল হাকিম বলেন, “১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা, গোপন বিপ্লবী ও সংসদীয় কমিউনিস্ট পার্টিসমূহের ভূমিকা, তৎকালীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা প্রভৃতি নিয়ে কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমর ব্যাখা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। সাম্প্রতিককালে পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগে রচিত ‘ইতিহাস’ সম্পর্কে কঠোর সমালোচনা করে উমর বলেছেন যে, এর নব্বই ভাগই মিথ্যা।”
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “কমরেড বদরুদ্দীন উমরের এই বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে উদ্ধৃত করে জামায়াতে ইসলামীর মুফতি আমির হামজা যে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। জনগণকে ইতিহাস ভুলে যাবার কথা বলে মুফতি আমির হামজা মূলত জামায়াতে ইসলামীর অতীত গণবিরোধী ভূমিকা জনগণের কাছে আড়াল করতে চাইছেন। এ হচ্ছে প্রকৃতই অসৎ ও মিথ্যাবাদী লোকের বৈশিষ্ট্য।”
এ বিষয়ে জানার জন্য মুফতি আমির হামজার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
ঢাকা/কাঞ্চন/রাসেল