ঢাকা     বুধবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গাইবান্ধায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫  
গাইবান্ধায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা শীতার্ত মানুষের

উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় গত কয়েক দিন থেকেই শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বেশি বিপাকে পড়েছে দিন মজুর ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। এছাড়া, শীতের তীব্রতায় হাসপাতালগুলোতে ভীড় বাড়ছে নানা বয়সী মানুষের। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ।

পৌষের শুরুতেই হিমেল বাতাসের দাপট থাকলেও গত কয়েক দিন ধরেই সকাল হলেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ, সঙ্গে বইছে মৃদু বাতাস; যা মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত করছে। সকাল থেকেই  মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।

আরো পড়ুন:

শীতের এই প্রকোপে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও নিম্ন-আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। জীবিকার তাগিদে সকাল থেকেই কাজে বের হতে হয় দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, কৃষিশ্রমিক ও বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষদের। বাহিরে লোকজন কম থাকা ও কাজ কমে যাওয়ায় আয় কমে গেছে এসব খেটে খাওয়া মানুষের।  

দিনমজুর এসব মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, “বেলা ১২টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও গতকাল মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকে সুর্যের দেখা নেই। আবার সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা আরো নেমে যাচ্ছে, ফলে ঘরের ভেতরেও শীত অনুভূত হচ্ছে। পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকা এবং উপার্জন কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে ভীষণ কষ্টে বসবাস করছেন তারা।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি গ্রামের চা দোকানি সাজু মিয়া বলেন, “পৌষের প্রথম সপ্তাহ পার হতে না হতেই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। যেকারণে দোকানে তেমন কাস্টমার আসছেন না। বেচা-বিক্রি একেবারেই কমে গেছে।”

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের অটোচালক জিয়া বলেন, “সকাল থেকেই  হাত-পা টাটানো শীত। মানুষ ঘর থেকে কম বের হচ্ছেন। যাত্রী কমে যাওয়ায় আয়েও টান পড়েছে।”

গাইবান্ধা শহরের দিনমজুর লাল মিয়া বলেন, “কয়েক দিন ধরে মহাজনের ঘরে কাজ নেই। ধার করে দিন পার করছি। একদিন কাজ করলে দুইদিন কাজ থাকে না। বউ-বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি। শীতের কাপড় কেনারও টাকা নেই। সরকারিভাবেও কোন শীতবস্ত্র পাইন”, জানান তিনি।

এদিকে শীতের কারণে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রতিদিন শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসিফুর রহমান বলেন, “শিশু ও বয়স্কদের অবশ্যই গরম কাপড় পরিধান করতে হবে এবং অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। ঠান্ডা বা বাসি খাবার পরিহার করতে হবে। ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি ও জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের গরম কাপড় পরিধানের পাশাপাশি তাদের ব্যাপারে পরিবারকে বাড়তি যত্ন নিতে হবে।”

শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে গাইবান্ধা শহরের ফুটপাতের মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণি বিতানে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, টুপি ও শীতবস্ত্র কিনতে দেখা যাচ্ছে নানা বয়সী মানুষকে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে এসব দোকান থেকে স্বল্প দামে গরম কাপড় সংগ্রহ করছেন।

চলমান শীত মৌসুমের আগামী দিনগুলোতে উত্তরাঞ্চলে শীতের এই পরিস্থিতি আরো জোরালো হতে পারে বলে জানিয়েছেন রংপুর আবহাওয়া অফিস। গত দুইদিন গাইবান্ধায় শীতের তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকলেও আজকে (২৪ ডিসেম্বর) গাইবান্ধার শীতের তাপমাত্রা কমে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে, যা চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, “কম্বল ক্রয়ের জন্য জেলার প্রত্যেক ইউএনওদের নগদ ৬ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। তারা কম্বল কিনে বিতরণ করছেন। এছাড়া, মজুদ কিছু কম্বলসহ গতকাল (২৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত জেলায় ২২ হাজার ৬০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।”

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, “শীতের শুরু থেকেই জেলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ শুরু করা হয়েছে। এটি অব্যহত থাকবে।”

ঢাকা/মাসুম লুমেন/জান্নাত

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়