ঢাকা     রোববার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে স্থবির উত্তরের জনজীবন

রংপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১২:৪৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে স্থবির উত্তরের জনজীবন

শীতের সকালে আলু ক্ষেতে কীটনাশক দিচ্ছেন এক কৃষক

উত্তরের জনপদে টানা পাঁচদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষ শরীরে জড়াচ্ছেন একাধিক স্তরের মোটা কাপড়।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রংপুর অঞ্চলের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র রেকর্ড হয়, যা এই বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস জানায়, রংপুর বিভাগজুড়ে তাপমাত্রার পারদ উঠানামা করছে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

আরো পড়ুন:

আজ সকাল ৯টার দিকে রংপুর নগরীর পার্ক মোড় আবু সাঈদ চত্বর এলাকায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রিকশাচালক হাসানের। তিনি বলেন, ‍“শীতে একেবারে কাহিল হয়ে গেছি। পেটের তাগিদে ঠান্ডাকে পাশ কাটিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। যাত্রী নেই। রোজগার আগের তুলনায় একেবারে কমে গেছে।” 

শুধু শ্রমজীবী নয়, এই বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে কৃষিখাতে। রংপুরের আলু চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা। ফসলের পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। 

রংপুর নগরীর নগর মীরগঞ্জ এলাকার শামসুল হক এবার এক একর ২০ শত জমিতে আলু চাষ করেছেন। শ্রমিক ছাড়াই তিনি জমিতে কাজ করছিলেন শীতের মধ্যে। ক্ষতির হাত থেকে আলু বাঁচাতে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতে দেখা যায় তাকে। 

শামসুল বলেন, “শীতের কারণে কৃষি কাজে অনেকটা ব্যাঘাত ঘটছে। আবহাওয়া যদি এমন থাকে, আলুর ফলন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দিনভর আলুর গাছ কুয়াশায় ভিজে থাকছে।”

রংপুর কৃষি বিভাগ জানায়, এই আবহাওয়ায় কৃষি উৎপাদনে আপাতত তেমন কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। তবে, শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে কিছু সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৈরী পরিস্থিতির সম্ভাবনা নেই।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদনের দিক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা রংপুরে চলতি মৌসুমে প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম আবাদ করা জমিগুলো থেকে আগামী এক মাসের মধ্যেই পুরোদমে আলু সংগ্রহ (হার্ভেস্ট) শুরু হবে। আর নিয়মিত চাষ করা আলু বর্তমানে প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে রয়েছে, যেগুলোর বয়স গড়ে এক মাসের কমবেশি।

এদিকে, শীতের এমন তীব্রতায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে প্রতিদিনই হাসপাতাল মুখী হচ্ছেন রোগীরা।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ধারণ ক্ষমতার বাইরে একটি বেডে চারজন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের অধিকাংশ শীতজনিত রোগ অর্থাৎ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে। 

হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে নাতির চিকিৎসা করাতে আসা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ এলাকার আছমা বেগম বলেন, ‍“আমার নাতনি আজ ছয়দিন ধরে নিউমোনিয়া জ্বরে কাহিল। কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা নিয়ে কোন উন্নতি হয়নি। পরে উপায় না পেয়ে চলে এসেছি রংপুর মেডিকেলে। এখানে এসে দেখি ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত অনেক বাচ্চা। এক বেডে ৩-৪ জন করে চিকিৎসা নিচ্ছে। আমাদের বেডেও চারজন শিশু রয়েছে। বাচ্চার চিকিৎসা নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”

তিনি জানান, গেল দুইদিনে এই ওয়ার্ড থেকে ছয়টি বাচ্চা মারা গেছে। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, শীতের কারণে কয়েকদিন থেকে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চিকিৎসা দিচ্ছেন। ঠান্ডাজনিত ঝুঁকি থেকে বাঁচতে শিশু ও বয়স্কদের পর্যাপ্ত উষ্ণ পোশাক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে রংপুরে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে উত্তরের আকাশ। দিনের বেলায় কুয়াশা কিছুটা কমলেও হিমেল ঠান্ডা কমছে না।”

তিনি আরো জানান, আগামী দুই এক দিনের মধ্যে তাপমাত্রার কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এরপর ২৯ ডিসেম্বরের পর নতুন করে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে। 

ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়