ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ছোটগল্প

মায়ার বাঁধন

আয়ান নুহা আলামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মায়ার বাঁধন

‘মায়া মুসিবত কা দুসরা নাম।’ মেয়েটার লাইফে এত সমস্যা, তা মায়াকে দেখে বোঝাই যায় না। বাস্তবে কিছুটা হাসিখুশি, চঞ্চল আর বাচাল টাইপের। কষ্ট যা আছে, তা সব বুকের ভেতরেই চেপে রাখে। কাউকেই বুঝতে দেয় না। খুব সহজ-সরল, সাদামাটা গ্রাম্য একটি মেয়ে। ভার্চুয়াল জগতে একটু অহংকারী ভাব নিয়েই থাকে। খুব বেশি কারো সাথে মিশতে চায় না। কেউ মিশতে চাইলেও পাশ কাটিয়ে চলে আসে। মোট কথা, বাস্তব থেকে ভিন্ন এক প্রকৃতির মেয়ে সে।

আজ হঠাৎ করেই মায়ার বুকের বাম পাশে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। মুহূর্তেই তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে, কেউ হাত দিয়ে হৃৎপিণ্ডটাকে কলিজা থেকে ছিঁড়ে আলাদা করে ফেলছে। মায়া কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে। তখন তার বাঁধনের কথা খুব বেশি মনে পড়ে। মনে মনে ভাবে, তখন যদি বাঁধন তার পাশে থাকতো, আর তার হাতে হাত রেখে ধরে রাখতো, তবে তার একটুও ব্যথা লাগতো না।

বাঁধনের সাথে মায়ার এক বছর আগে ফেসবুকে পরিচয় হয়। মায়ার সাথে বাঁধনের এখনো সরাসরি দেখা হয়নি। দু’জন দু’জনের ছবি দেখেছে মাত্র। দু’জনেই স্রোতের বিপরীতমুখী মানুষ। তাই হয়তো খুব অল্প দিনেই দু’জনের একটা নিয়মের বাইরে ভিন্ন এক নিয়মের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

ব্যথা উঠার কিছুক্ষণ পরে ধীরে ধীরে তার নিঃশ্বাস আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। মায়া অনেক আগে থেকেই জানে, তার হার্টে সমস্যা আছে। ডাক্তার বলেছে, তার হার্ট অনেক দুর্বল। মায়া যেন নিয়মিত ঔষুধ খায়। কিন্তু কে শুনে কার কথা। মায়া এই সবের কোনো পাত্তাই দেয় না। ছয় মাসেও একবার ডাক্তার দেখায় না সে। ঔষধ খাওয়া তো দূরের কথা।

গতকালই মায়া বাঁধনের সাথে কথা বলার সময় আগের দিন রাতে তার দেখা স্বপ্নের কথা শেয়ার করে। মায়া স্বপ্নে দেখে তার ক্যান্সার। মাথার চুলগুলো ধরতে না ধরতেই হাতের মুঠোয় চলে আসতেছে। হালকা লাল, সোনালি পাটের আঁশের মতো চুল। বাঁধন মায়ার স্বপ্নের কথা শুনে খানিকক্ষণ স্থির হয়ে যায় এবং নিজেকে সামলিয়ে বলে, হুম ভালো তো!খুব ভালো স্বপ্ন।

মায়া বলে, কি বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার?

বাঁধন-হবে না কেনো। আর কি কি স্বপ্ন দেখেছো?

তখন মায়া তার বাঁধনকে নিয়ে দেখা সব স্বপ্নের কথা বলতে থাকে।

ওপাশ থেকে নীরব হয়ে বাঁধন তার মায়ার সব স্বপ্নের কথা শুনতেছে, আর বলতেছে, আমাদের স্বপ্নগুলো পূরণ হবে তো? নাকি পৃথিবীর ধরা-বাঁধা নিয়মে কোথাও আটকা পড়ে যাবে? তখন মুহূর্তেই দু’জনের মন খারাপ হয়ে যায়। তখন মায়া কান্না করতে থাকে প্রচুর। এই কান্না, হাসি, সুখ-দুঃখ নিয়েই চলতে থাকে তাদের জীবন।

মায়া খুব স্বপ্নবাজ। স্বপ্ন দেখতে সে অনেক ভালোবাসে। ছোট্টবেলায় মায়া স্বপ্নে একবার জলপদ্ম দেখেছিলো। সে ফুলের জন্য মাঝ পুকুরে সাঁতার দিয়েছিলো। টকটকে লাল রঙের কি আশ্চর্য এক ফুল!যে ফুলের কাছে যাওয়া যায় না, যাকে স্পর্শও করা যায় না। শুধু দূর থেকে অপলক নয়নে মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। মায়া ধীরে ধীরে বড় হলো সেই জলপদ্মের স্বপ্ন চোখে নিয়ে। সব স্বপ্নতো বলা যায় না, সব স্বপ্নতো বলে বেড়াবার নয়। কিছু স্বপ্ন মনের গহীনে লুকিয়ে রাখতে হয়। মায়ার খুব ইচ্ছা, সে প্রথম বাঁধনের সাথে জলপদ্ম দেখবে। কিছু কিছু জিনিস আছে একা দেখতে নেই। দু’জন মিলে দেখতে হয়। সেই আশায় আজও তার জলপদ্ম দেখা হলো না।

মায়ার খুব স্বপ্ন বাঁধনকে নিয়ে। এবার সত্যি সত্যিই মায়ার ক্যান্সার ধরা পড়লো। সে বাঁধনকে ব্যাপারটি জানায়নি।

মায়া একদিন বাঁধনকে ফোনে বলে, আচ্ছা আমি যদি মারা যাই, তুমি কি কাঁদবে না?

বাঁধন বলে, না কাঁদবো না।

কষ্টও হবে না তোমার?

-না হবে না।

-সত্যিই একটুও কষ্ট হবে না তোমার?

-তখন বাঁধন ফোনের ওপাশ থেকে কান্না শুরু করে দেয়। যে কান্নার আওয়াজ সবাই দেখে না, শুনেও না। শুধু অনুভূতির চোখ ও কান দিয়ে দেখতে শুনতে হয়।

-বাঁধন অনেক কষ্টে নিজের কান্না চেপে ধরে বলে, আচ্ছা মায়া আমাদের তো এখনো দেখা হয়নি।

-মায়া বলে, হ্যাঁ। এখনো তো এক মুহূর্তের জন্য একবার ছুটে দেখতে এলে না। আচ্ছা বাঁধন, আমি মরে গেলেও কি তুমি আমায় দেখতে আসবে না।

বাদন বলে, হ্যাঁ আসবো। দূর থেকে এক মুহূর্তের জন্য তোমায় দেখে চলে যাবো।

মায়া বলে, একি বলো? আমার কাছে এসে পাশে বসবে না?

বাদন বলে কীভাবে বসবো বলো। তোমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন কেউই যে আমায় চেনে না। আমায় কি ওরা তোমার পাশে বসে তোমায় দেখতে দেবে?

আচ্ছা মায়া বাদ দাও তো এসব কিছু। আগামীকাল তোমার জন্য খুব সুন্দর দামি একটা স্পেশাল গিফট আছে। সেটা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাবে। কি নিতে আসবা না? বাদন বললো।

মায়া বললো, অবশ্যই আসবো।

আজ মায়া খুব সুন্দরভাবে সেজে নীল শাড়ি ও লাল টিপ পরে কুরিয়ার সার্ভিসের সামনে গেলো। গিয়ে তো মায়া পুরা অবাক!

সে তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না যে, বাঁধনই তার সেই স্পেশাল গিফট।

বাদন মায়াকে দেখে বললো, কি ম্যাডাম অবাক হলেন। কেমন হলো সারপ্রাইজটা?

মায়া তো এক আকাশ সমান আনন্দে কান্নায় জড়িয়ে ধরলো বাঁধনকে। মুহূর্তের জন্য মায়া ভুলে গেলো তার যে ক্যান্সার, সময় যে তার আর বেশি নেই। কিন্তু মায়া বাঁচতে চায়। তার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে শুধু বাঁধনের জন্য। এক সাথে চোখে চোখ রেখে জলপদ্ম দেখার জন্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়