ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভালোবাসা কেন ব্যাখ্যাতীত?

আমিন পিয়াল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩০, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভালোবাসা কেন ব্যাখ্যাতীত?

কি-বোর্ডে হাত রেখে ঘণ্টাখানেক বসে আছি, ভাবছি ভালবাসা নিয়ে কী লিখবো। পৃথিবীর সকল কবি, লেখক, গুণীজনরা ভালোবাসা নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে অনেক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু আমার কাছে যে ভালোবাসা আজও ব্যাখ্যাতীত।

আসলে ভালোবাসা কী? এই যে আমি হাসলাম, যারা আমার এই পাগলামোটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, এটাও হয়তো একটা ভালোবাসা। ভালোবাসাবাসি বলতে আমরা কী বুঝি? এই প্রশ্নটাই সবচেয়ে কঠিন ও সহজ। তাই শত উত্তর, শত ব্যাখ্যা ব্যাখ্যাতীত।

আমি একজনকে ভালোবাসি, ও সপ্তাহ খানেক আগে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি আমাকে কেন ভালোবাসো? প্রশ্নটা আমাকে ভাবিয়ে তুলল! আসলেই আমি কেন ভালবাসি? যা বুঝলাম, আমি আসলেই ভালোবাসার জন্যই ভালোবাসি।

আজ বিকেলে ও আমাকে বলল, তোমার জন্য আমার বিন্দুমাত্র অনুভূতি নেই। হ্যাঁ, তোমার অনুভূতি না থাকার এই ‘না ফিলিংস’ টাকেই আমি ভালোবাসি। কারণ, আমি ভালোবাসি। যেটার ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।

আজকাল আমরা ভালোবেসে কাউকে বিয়ে বা পাওয়ার চিন্তা করি। না পেলে তাকে আর ভালোবাসা যাবে না। এমন চর্চা অনেকেরই আছে। কেন? কাউকে ভালোবাসা তো পাওয়ার জন্য হতে পারে না, এটা তো শুধু ভালোবাসার জন্যই হওয়া উচিৎ। কাউকে ভালোবেসে কখনো জয়-পরাজয় হয় না, এটা শুধু ভালোবাসাই হয়। ভালোবাসলে কেউ কখনো হেরে যায় না।

আমি যেই মানুষটাকে ভালোবাসি, তার সঙ্গে আমার কিছু দিন আগে ব্রেকআপ হয়। এখন সে নাকি আমাকে বা অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবেন না। আমি যা বুঝি, কারো সঙ্গে আপনার রিলেশন ব্রেক-আপ হলে, আপনার অন্তরের অনুভূতিটা খানিক বা কিছু সময়ের জন্য থেমে যায়, একটা চাপ সৃষ্টি হয়, আর কিছুই নয়। আর সেই চাপা কষ্টটা সারানোর একমাত্র মহৌষধ ভালোবাসাই।

কথায় আছে না, ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয়।’ ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসার রোগ সারাতে হবে। ভালোবাসা কখনো নষ্ট হয় না, হবে কীভাবে! শুনেছি, মানুষ সৃষ্টির আগে ভালোবাসার সৃষ্টি, তাহলে কী দাঁড়াল? ভালোবাসা আমাদের চেয়েও বড়, আর কষ্টটা সেখানে চুনোপুঁটি মাত্র।

অনেককে বলতে শুনেছি, ভালোবাসায় নাকি কোনো রঙ নেই, কোনো গন্ধ নেই, ভালোবাসা নাকি শুধুই ভালোবাসা। ভালোবাসায় অনেক সুখ ও রঙ রয়েছে, আপনাকে নিজের মতো করে খুঁজে নিতে হবে। সেটা হতে পারে যে কারো প্রতি, যেকোনো কিছুর প্রতি।

আসলে ভালোবাসা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়। এক বন্ধুর কথা বলা যেতে পারে। সে মধ্যপ্রাচ্যে থাকে। আমার সাথে বাংলাদেশের খেলা নিয়ে ফোনে কথা বলছিল। একটা পর্যায়ে বলল, ‘একদিন সারা রাত অফিস করে সকালবেলা বাসায় যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি রাস্তার মাঝখানের লেনে বড় করে ‘বাংলাদেশ’ লেখা। জানেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে যে ম্যাচটা জিতেছিল, ওই ম্যাচে যতটা আনন্দ পেয়েছি, ঠিক ততটাই আনন্দ বাংলাদেশ লেখাটা দেখার পর পেয়েছি।’ এটাও একটি ভিন্ন মাত্রিক ভালোবাসা, ক্রিকেট এবং দেশের জন্য।

এখন যে প্রেমিক যুগলকে কেন্দ্র করে ভালোবাসা দিবস, তাঁরা কিন্তু শুধু ১৪ ফ্রেব্রুয়ারিতেই ভালোবাসেনি, আগে বা পরেও ভালোবাসছেন। শুধুই ভালোবাসছেন। হ্যাঁ, একদিন ভালোবাসা দিবস শুধু তাদের জন্য, যারা ভালোবাসতে জানেন না, যারা ভালোবাসায় ত্যাগ বোঝেন না। 

যারা প্রকৃত ভালোবাসতে জানেন, যারা ভালোবাসায় কোনো প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব করেন না, তাদের জন্য যদি পৃথিবীর সকল রাস্তাকে কাগজ বানিয়ে দেয়া হয়, আর সেখানে ভালোবাসার কথা লিখতে দেয়া হয়, তারপরও আরো এক পৃথিবী সমান রাস্তার প্রয়োজন পড়বে। হয়তো এজন্যই ভালোবাসা ব্যাখ্যাতীত।

লেখক: শিক্ষার্থী, প্রাইম ইউনিভার্সিটি।


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়