ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বসন্তে অতিথি পাখি!

আজাহার ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বসন্তে অতিথি পাখি!

ঋতু বৈচিত্রে প্রকৃতিতে ফাগুনের ছোঁয়া। হাড়কাঁপানো শীতের তীব্রতাও কমছে অনেকটাই। ঋতুর এই পালা বদল আর শীতের বিদায়ী ক্ষণে বাড়ছে কুয়াশা। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে শীত নেমেছিল শহর থেকে দূরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এই নিবিড় পল্লীতেও।

শীতের আগমনের সাথে সাথে তাই ইবি লেকে অতিথি পাখির আগমন ছিল প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে এ বছর অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে শীতের শেষে। এদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজ লেক সংলগ্ন এলাকা।

প্রতিবছর এসব হাজারো পাখির নয়া আমেজে নয়া আনন্দ মেলা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। পাখিদের কলকাকলিতে ১৭৫ একরের সবুজ ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে আরো প্রাণবন্ত। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। রীতিমতো ক্যাম্পাসের পাখিপ্রেমিদের মনে সাড়া জাগিয়ে দিয়েছে এরা। আর অতিথি পাখিকে ঘিরেই যেন সকল আনন্দের উৎসব। আর এ উৎসব অন্য কোনো উৎসব নয়! এ উৎসব অতিথি পাখিদের বরণ করার।

আর তাই! মফিজ লেকের হাজারো পাখ-পাখালির এমন নিবিড় আত্মার আত্মীয় ভাবাপন্ন আপন করা মায়াবী জালে আটকা পড়ে হাজারো অতিথি পাখি। এ মায়ার টানে তাই ফিরে আসে প্রতিবছরই হাজারো মাইল দূর দেশের পরবাসী অতিথি পাখি। নতুন ঋতু, নতুন আবহাওয়া, নতুন করা সব আতিথেয়তার সকল প্রস্তুতি ইবির মফিজ লেক জুড়ে। শত-শত শুভ্র বক, বুনো শালিকের দল, টিয়ে, ময়না, ফিঙে, মাছরাঙা, সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুঁনতে হাঁস, বালি হাঁস, মানিকজোঁড়সহ হাজারো অতিথি পাখির ডুব সাঁতারে তৈরি হয় এক নতুন ফটো অ্যালবাম। যে অ্যালবাম জুড়ে থাকে পাখিদের ডুব-ডুব লুকোচুরি, খুনসুটি। অনেক কষ্টে একটি পুঁটি শিকারের পর গলধকরণ পরবর্তী মাছরাঙার পানি শুকানোর ডানা ঝাপটা।

নাম না জানা নানা বর্ণ আর আকারের এই পাখিগুলো সূর্যিমামা পূর্বাকাশে উঁকি দেয়ার পূর্ব মূহুর্তে আসে ক্যাম্পাসের পুকুর ও লেক এলাকায়।  কিচিরমিচির ধ্বনিতে ঘুমিয়ে থাকা ক্যাম্পাসকে জাগিয়ে তোলে। যেন এক নৈসর্গিক আবহাওয়া। সকালে এমন মিষ্টি ধ্বনি ও গোধূলি শেষে যখন সূর্য ডুবু ডুবু অবস্থা, ঠিক তখন মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় এসব পাখি। উড়ে গিয়ে বসে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ডালপালায়। রাতের বেলা স্থান নেয় ক্যাম্পাসেই। সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায় সকাল-বিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পুকুর ও লেক সংলগ্ন এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড়।

প্রতিবছর নাম না জানা হাজারো পাখির আগমন ঘটে আমাদের দেশে। আমাদের দেশের খাল-বিল, হাওড়-বাওর, পুকুর, জলাশয় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এদের কলকাকলিতে। হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসে নাম না জানা এসব পাখি। আমরা এদের অতিথি পাখি বলে থাকি। আমাদের অতিথি হলেও তারা মূলত আসে জীবন বাঁচাতে। ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।

শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে অতিথি পাখিরা চলে যায় তুলনামূলক যে দেশে শীত কম। তাছাড়া তীব্র শীতে খাবারেরও অভাব দেখা যায়। অধিকাংশ সময় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে। সেই সাথে রয়েছে তুষারপাত। জন্মাতেও পারে না কোন গাছপালা। সব মিলিয়ে পাখিদের থাকা ও খাবার সংগ্রহ করা তুলনামূলক অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এসব পাখি আসে উত্তর মেরু, সাইবেরিয়া ইউরোপ, এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আসে পাসের কিছু এলাকা থেকে।

পরিবেশবিজ্ঞান ও ভূগোল বিভাগের প্রভাষক বিপুল রায় বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির আগমন একটি গর্বের বিষয়। আমাদের উচিৎ তাদের জন্য আবাস্থলগুলোর সুরক্ষা দেয়া। আবাসস্থলগুলো যেন কেউ বিনষ্ট করতে না পারে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের রক্ষা করা উচিৎ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হতে হবে। পাখিদের যেন কেউ ক্ষতি না করে।’

আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শোভন বলেন, ‘সকালবেলা ক্যাম্পাসে হাঁটতে ভালোই লাগে। অতিথি পাখির আগমনে আরো ভালো লাগছে। অতিথি পাখিদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দারুণ আনন্দ পাই। বিকেল হলেই বন্ধুদের সাথে নিয়ে পাখিদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে যাই।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়