ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

একাত্তরের চেতনায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’

মাথিয়া ঐশী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩২, ৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
একাত্তরের চেতনায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না। তিনি একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আন্দোলন থেকে একটি সংগ্রাম এবং সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশের স্থপতি। তিনি একটি দেশ ও একটি জাতির ইতিহাস। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।

বিশ্ব রাজনীতির অবিসংবাদিত কিংবদন্তি তথা বাংলা ও বাঙালি জাতির অমর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতার স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে দেশের অন্যতম ও ক্যাম্পাসভিত্তিক সর্ববৃহৎ ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। যা ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি স্মরণকালের ঐতিহাসিক সমাবর্তনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শুভ উদ্বোধন করেন।

ম্যুরালের মূল পরিকল্পনাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী। মূল স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য সিঁড়িসহ ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩৮ ফুট। বেদির উচ্চতা ৫ ফুট। বেদির উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দৈর্ঘ্য ২৬ ফুট এবং প্রস্থ ১৭ ফুট।

এটি রড, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এর তিনটি সিঁড়ি রয়েছে। সম্পূর্ণ সিঁড়িগুলো উন্নতমানের সিরামিক দ্বারা সুসজ্জিত করা হয়েছে। স্থাপনার তিন দিকে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে দুই স্তরের জায়গা রয়েছে। মূল বেদির ওপর একটি দেয়াল স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন। এছাড়া বেদিসহ অন্য জায়গাগুলোতে উন্নতমানের টাইলস স্থাপন করা হয়েছে।

মূল প্রতিকৃতির ডানপাশে ৪ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট উচ্চতার একটি দেয়াল স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালী হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা, যে ভালবাসা আমাকে রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা এই অমর বাণী লিপিবদ্ধ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জালাল উদ্দিন তুহিনের যৌথ অর্থায়নে এটি নির্মিত হয়েছে।

ম্যুরালটির নকশা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. আলীমুজ্জামান টুটুল। এটির শিল্পী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের কনক কুমার পাঠক। ম্যুরালের নির্মাণ খরচ প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। ক্যাম্পাসে এত নান্দনিক, বৃহদাকার ম্যুরাল তৈরিতে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এটি কেবল একটি ম্যুরালই নয়, এটি একটি শিল্পকর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

মূলত বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরতে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ স্থাপিত হয়েছে। সে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে বাস্তব জীবনে এর সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সদা সচেষ্ট থাকে, সে লক্ষ্যেই এটি স্থাপন করা হয়েছে।

এটি অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ভাস্কর্য হয়ে সুপরিচিতি লাভ করেছে। ম্যুরালের পাদদেশে এসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকে। শুধু তাই নয়, সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে যেকোনো অনুষ্ঠানে এখানে আসলে যেন সবাই প্রাণ খুঁজে পায়।

অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর এই ম্যুরালের পাদদেশে আসলে তার আদর্শের কথা স্মরণ হয়। তার আদর্শ বুকে থাকলে কাজের প্রতি শক্তি জোগায়, মনে সাহস আসে, কাজের প্রতি মন বসে।

এটি শুধুই একটি ম্যুরালে সীমাবদ্ধ নয়, এটি একটি সৎ মানুষ গড়ার, একটি অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার, একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার এবং সুন্দর পৃথিবী গড়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

মাথিয়া ঐশী/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়