ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘বন্ধু আর ফিরে আসবে না’

এবিএস ফরহাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৮ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘বন্ধু আর ফিরে আসবে না’

মানুষ হারিয়ে যায়, দূর সীমানায়, অতল গহীনে- জানা আর অজানায়! রক্তক্ষরণ শব্দটির সাথে পরিচয় নেই আমার। কাছের মানুষ হারিয়ে গেলে রক্তক্ষরণ হয়, সে অনুভূতি কীভাবে প্রকাশ করতে হয় সেটাও জানা নেই। কিন্তু বন্ধু হারিয়ে সেই অনুভূতি বুঝতে শিখেছি। জানি, বন্ধু আর ফিরে আসবে না আমাদের মাঝে, তবুও তার অপেক্ষায়।

তুই আজ আমাদের ৪৫ জনের কাছে শুধুই স্মৃতি। যখনই করোনাকালীন ক্লাসরুমের কথা, হলের কথা, আড্ডার কথা মনে পড়ে, সেখানে কেন জানি শূন্যতা অনুভব করছি। কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না তুই নেই আমাদের মাঝে। বহুকথা তোকে বলা হয়নি। বন্ধু তুই আর ফিরে আসবি না কথাটি ভাবতেই চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। বন্ধু হারিয়ে এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাওয়ার্দী ভূঁইয়ার বন্ধুরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন শুধু বন্ধুর স্মৃতিচারণ।

তার বন্ধু সাদ লিখেছেন, বন্ধুরে ক্যাম্পাসের প্রতিটা সংগঠন কত ভালোবাসে তোরে, যদি জানতি, হয়তো এভাবে হারাতি না। জানি ভালো আছিস তুই।

সানজিদা ইসলাম লিখেছেন, এইভাবে চলে যেতে হয়? তোকে শেষবার বলেছিলাম দেখা হবে খুব শীঘ্রই। তুই বলেছিলি ইনশাআল্লাহ দেখা হবে বান্ধবী, তুই কথা রাখলি না। আর কখনো দেখা হবে না। ভালো থাকিস বন্ধু।

সাকিব লিখেছেন, প্রিয় বন্ধু তোর মৃত্যুর দিনে দু’চারটি কথা খুব মনে পড়ছে। এখন থেকে হয়তো আমাকে রাস্তায় পেলে জড়িয়ে ধরে আর বলবি না, বন্ধু তোর সাথে চা খাবো, পারসোনাল কিছু কথা আছে। এখন থেকে আমার হল রুমে আমার বন্ধুটি আর হঠাৎ আর ছুটে আসবে না। এখন থেকে আমাকে আর বলবে না যে দোস্ত তোকে মন থেকে অনেক ভালোবাসি। এখন থেকে আমাকে আর কেউ বলবে না যে দোস্ত তোকে অনেকবার ফোন দিয়েও পাইনা, ফোন সাইলেন্ট রাখোস কেনো।

স্যরি তোর জানাজায় অংশ নেওয়া আমাদের উচিৎ ছিল, বাট দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা অনেকেই উপস্থিত হতে পারলাম না। আমাদেরকে ক্ষমা করে দিস।

ঈশা একটা ছবি দিয়ে লিখেছেন, ভাই তোর এই ছবিটা আমি তুলে দিসিলাম গত বছর বার্ডে। সবসময় বেশি ছবি তুলতি দেখে পচাইতাম তোরে। তুই সত্যি সত্যি আজ ছবি হয়ে গেলি! তুই আর বড় হবি না? এটুকই থাকবি বুঝি? সবসময় লাফাতি বিয়ে করার জন্য, ওটাও হবে না?

হাবিব লিখেছেন, আমি হতবুদ্ধ হয়ে গেলাম। শরীর কাঁপছে, বিশ্বাস হচ্ছে না, বিশ্বাস হচ্ছে না, বন্ধুর সাথে আর জীবনেও দেখা হবে না।

কাইছার লিখেছেন, ছেলেটাকে পুকুরপাড়ে একা রেখে আসলাম। এক বছর আগে বাবা মারা যাওয়ায় অনেক কষ্ট পেয়েছিল, তারপর পরিবারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। সব সময় ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু আজ সব শেষ হয়ে গেলো। তার একটা গুণ সবসময় ভালো লাগতো। সবার সাথে সহজেই মিশতে পারতো, যেটা আমি কখনোই পারি না। একসাথে কাটানো সময়গুলো স্মৃতি হিসেবে যতই মনে পড়ে ততই খারাপ লাগে। আল্লাহ তোকে ভালো রাখুক।

নাসরিন লিখেছেন, জানি না কেমন ছিলো তোর মৃত্যু যন্ত্রণা। জানি না কি করছিস এখন তুই। অনন্তকালের জন্য চলে গেছিস। এই পৃথিবীতে মায়া সব তুচ্ছ মৃত্যুর কাছে। একদিন আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে।

সাফিয়া লিখেছেন, খবরটা শোনার পর থেকেই বুকটা ধুক ধুক করে কাঁপতেছে। আল্লাহ আপনি যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন মানছি। কিন্তু এমন একজন ভালো মনের মানুষ চলে গেছে, সেটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

কুবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়