ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘পরিবারের সুপার হিরো বাবা’

আল আমিন ইসলাম নাসিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৩, ২১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘পরিবারের সুপার হিরো বাবা’

বাবা মানে কারো নিকট চরম অভিমান, ভালোবাসা, আবেগ খুনসুটির নাম। আবার বাবা মানে কারো নিকট ভয়, রাগ কিংবা মনোমালিন্যের কারণ। তবে বাবা মানে যেটাই হোক না কেন, তার অন্তর যেন সন্তানদের জন্য স্নেহ, ভালোবাসায় সবসময় সিক্ত হয়ে থাকে।

তবে বাবারা সন্তানদের ভালোবাসলেও অনেক সময় ভালোবাসা প্রকাশ না করার কারণে বা দামি আবদার না পূরণে তাদের সঙ্গে যোগাযোগটা ঠিকঠাক গড়ে উঠতে পারে না। আমাদের পরিবারে এই জিনিসটা যেন আরও বেশি হয়, বাবাকে অনেকে দূরের কেউ ভেবে থাকেন।

তবে এই দূর হওয়াটা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন- সন্তানের আবদার পূরণে ব্যর্থ, তার বেশি যত্ন নেওয়া বা লেট নাইট বন্ধুদের সঙ্গে যাওয়া থেকে বারণ করা, পকেটমানি কম-বেশি দেওয়া এসব বিষয়গুলো যেন বাবাকে সন্তানদের দিক থেকে দূরে ঠেলে দেয়।

কেননা একটা বয়সের পর সন্তানেরা সর্বক্ষণই চায় স্বাধীন থাকতে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে, দামি মোটরসাইকেল বা ফোনের মতো আবদার ইত্যাদি। যখনই সন্তানেরা এগুলো বাবার কাছে পেতে ব্যর্থ হয়, তখনই যেন তারা ডিপ্রেসনে বা বাবা থেকে দূর দূর হয়ে যায়।

উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত বাবাদের মধ্যে সন্তানের জন্যে ভালোবাসা ঠিক থাকলেও এই আবদার বা এই দূরের বিষয়গুলো যেন সামান্য ভিন্ন হয়ে থাকে। উচ্চবিত্ত বাবাদের অধিকাংশই সন্তান স্বাধীনতা, অতিরিক্ত পকেটমানি, দামি আবদার এগুলোর পূর্ণতা পায় বলে তাদের সঙ্গে বাবাদের দূরত্বটাও একটু কম কম থাকে বলা যায়।

নিম্নবিত্ত বাবা বা সন্তানের মধ্যেকার পরিস্থিতি বা দূরটাও যেন একটু স্বাভাবিকই থাকে। এর কারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা সবসময়ই কম পেয়ে, কম দেখেই বড়ো হয়। ফলে এদের থাকে না বাবার কাছে কোনো আবদার, থাকে না কোনো অপরিপূর্ণতার মতো বড়ো অভিলাষ আশা বা ইচ্ছে। থাকলেও তা অনেকাংশেই কম। ফলে তাদের মধ্যোকার বন্ডিংটাও অনেকাংশে ঠিকঠাক থাকে।

সত্যি বলতে, বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের বাবাদের সঙ্গে সন্তানের মেলবন্ধন অনেকাংশেই বেশি মধ্যবিত্তের চেয়ে। তবে অনেকাংশে তার বিকল্প কিছু থাকতে পারে।

তন্মধ্য, মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবারা যেন একটু ভিন্নই। বলা যেতে পারে মধ্যবিত্ত পরিবারের সুপার হিরো বাবা। কেননা তাদের সেই আধছেড়া বাটা জুতা, ময়লা টি-শার্ট, পুরনো সেই খাকি প্যান্ট একই থাকলেও সন্তানদের ইচ্ছা বা আবদার পূরণে যেন একরাশ ক্লান্তি নেই, নেই কোনো অবসাদ। মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা, সন্তানদের বা পরিবারের ভরণপোষনের জন্য সেই এক পোশাক, এক ছাতি, পায়ে হেঁটে অফিস যাওয়া এসবগুলো যেন সুপার হিরোর মতো নিঃস্বার্থে তাদের ভালোবেসে করে যায় বছরের পর বছর।

পাশাপাশি কিস্তির ঋণ যেন সর্বদা লেগেই থাকে মধ্যবিত্তের পরিবারের বাবার। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সন্তানের মোটরসাইকেল বা দামি ফোন কেনা, ঈদের জন্য সন্তানদের নতুন পোশাক কেনা, অ্যাডমিশন ফি কিংবা চিকিৎসার জন্য একটুও যেন বাবা পিছুপা হয় না। এই বাবার উদাহরণ টেনেই হয়তো বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একটাও খারাপ বাবা নেই’।

সত্যিই হয়তো ঠিকই বলেছিলেন উনি, নাহলে যে বাবা সবসময় সন্তানদের বকাবকি করে কিংবা কড়া শাসনে রাখে, সে বাবাই সন্তানদের জন্য বাজার থেকে বড়ো মাছটা কিংবা এক ডজন ডিম কিনে আনে। জানে যে, শাকসবজি আমার ছেলে বা মেয়ে বেশি একটা খেতে পছন্দ করে না খেতে। আবার সেই বাবাই সন্তানের মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা শুনে হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। কেননা পৃথিবীতে সন্তানদের লাশ বাবার কাঁধে নেওয়ার মতো কঠিন কাজ আর হয়তো নেই।

তবে বাবা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত যে পরিবারেই হোক না কেন, সন্তানদের জন্যে বাবার যে ভালোবাসা তা যেন চির মলিন। এই ভালোবাসায় নেই কোনো খাদ। বাবা যে সন্তানদের মাথার তাজ বা মুকুট তবে বাবার ক্ষেত্রে তা যেন সম্পূর্ণই ভিন্ন। বরং বাবার নিকট সন্তানই তার মাথার তাজ মনে করে থাকেন।

বাবা হলো সন্তানদের মাথার ছাদস্বরূপ। ছাদ যেমনিভাবে আগলে রাখে ঝড়, বৃষ্টি, ধুলোবালি থেকে তেমনি বাবাও তাদের সন্তানদের আগলে রাখে বাইরের সমাজের মানুষের ঝড় থেকে, রক্ষা করেন উদ্ধার টিমের মতো। ইমারজেন্সি কোনো বিপদে পড়লে সন্তানরা, বাবাই যেন তাৎক্ষণিক এসে রক্ষা করেন।

সব মিলিয়ে বলতে গেলে, বাবা আমাদের পরিবারের সুপার হিরো। যে হিরো নিঃস্বার্থে দিন রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। তারা নিজেরা অতিরিক্ত খরচ না করে সন্তানদের জন্য সঞ্চয় করে রাখছেন।

বাবার নেই কোনো দাবি, নেই কোনো বড় আবদার, নেই সন্তানদের কাছে বড় চাওয়া পাওয়া। প্রত্যোক বাবার যেন একটাই ইচ্ছে তাদের সন্তান যেন সাফল্যের সবোর্চ্চ সিঁড়ি পাড়ি দিক।

এই নিঃস্বার্থ, আত্মত্যাগী বাবার জন্য জানাই লাল সালাম। এই নিঃস্বার্থ, আত্নত্যাগী পরিবারের সুপার হিরো বাবা ছাড়া যেন অন্য কেউ হয়তো আর হতে পারবে না। তবে বাবা-সন্তানদের মধ্যকার ভালোবাসা হলো অপ্রকাশ্যের ভালোবাসা। কেউ কাউকে বলতে না পারা ভালোবাসা। সহস্র মানুষের মধ্যে যারা যারা এ কথাটা তাদের বাবাকে বলতে পারেন, তাদের মতো সৌভাগ্যের অধিকারী হয়তো আর কেউ নেই।

আজ বিশ্ব বাবা দিবসে আসুন সেই সুপার হিরো বাবার জন্যে পারলে কিছু উপহার দেই। অথবা একবার অন্তত জড়িয়ে ধরে বলি, বাবা ভালোবাসি তোমায় খুব। আর তাও যদি না পারি, তবে বাবার কাজে সহায়তা করি একটু। আর যাদের বাবা নেই, তারা এই দিনে সৃষ্টিকর্তার নিকট বাবার জন্য দোয়া করি।

এই বাবা দিবসে বাবাদের জানাই শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বাবা নামক পরিবারের সুপার হিরোদের। আমার বাবা, আমার সুপার হিরো। প্রতিটি দিন হোক, বাবা-সন্তানদের আনন্দের, ভালোবাসার।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ইবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়