ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আইনের চোখে প্রেম-বিয়ে

জিসান তাসফিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:১০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০
আইনের চোখে প্রেম-বিয়ে

মানুষ সামাজিক জীব। একতাবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। ফলে পরস্পরের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একজনের সঙ্গে অন্যজনের নানাভাবে সম্পর্ক হয়। রক্তের সম্পর্ক, আত্মীয়তার সম্পর্ক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, বন্ধুত্বের কিংবা প্রেমের সম্পর্ক। 

সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে কিছু সম্পর্ক সমাজ কর্তৃক বৈধ হয়, কিছু সম্পর্ক বৈধ-অবৈধ কোনটাই নয়, আবার কিছু অবৈধ। বৈবাহিক সম্পর্ক হলো সামাজিকভাবে, আইনত ও ধর্মীয়ভাবে বৈধ। আবার প্রেমের সম্পর্ক কিছু ক্ষেত্রে অবৈধ আবার কিছু ক্ষেত্রে আইনত কোনো সংজ্ঞায়নই নেই। 

একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ বৈবাহিকভাবে পরিবার স্থাপনের লক্ষ্যে যে সম্পর্কে আবদ্ধ হয় সেটা বিবাহ। এর মাধ্যমে উভয় তার প্রয়োজনীয় সব চাহিদা মিটিয়ে থাকে। কিন্তু প্রেমের মাধ্যমে যে সম্পর্ক হয় তার ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে। কেউ জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য, কেউ অবসর সময় কাটানোর জন্য, কারও ইচ্ছা থাকে প্রতারণা করার, আবার কেউ ভবিষ্যতে বিবাহে আবদ্ধ হবে এই উদ্দেশ্যে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে।

এসব প্রেমের সম্পর্ক আইনত ভিত্তিহীন। কারণ এসব মৌখিকভাবে হয়ে থাকে এবং অচিরেই প্রত্যাখ্যান করা যায়। এক্ষেত্রে প্রতারণার স্বীকার হলে আইনত কোনো প্রতিকার নেই। এক পক্ষ যদি অস্বীকার করে, এরূপ সম্পর্ক হয়নি কিংবা এমন কোনো কথা দেওয়াও হয়নি অথবা যদি দাবি করে শুধু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়েছিল, যার কারণে একসঙ্গে চলা-ফেরা, কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক হয়নি। তাহলে তা প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। তবে বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা এখানে লিখিত চুক্তি থাকে, রেজিস্ট্রেশন থাকে এবং সাক্ষী থাকে, ফলে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। 

যেকোনো ধরনের সম্পর্কে প্রতারণা সংঘটিত হতে পারে। বৈবাহিক সম্পর্কে যেসব প্রতারণা হয়ে থাকে, তার আইনত প্রতিকার রয়েছে। প্রেমের সম্পর্ক প্রতারণা হলেও সব সময় যে আইনি প্রতিকার নেই এমন নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনত অপরাধ, আবার কিছু ক্ষেত্রে আইনত প্রতিকার রয়েছে। 

যেমন কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে বিয়ের আশ্বস্ত করে শারীরিক সম্পর্ক করে প্রতারণা করে, তাহলে তা আইনত অপরাধ বলে গণ্য হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী এ অপরাধ ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে এবং যার শাস্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। এছাড়া অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে অর্থদণ্ডও হতে পারে। কিন্তু একইভাবে কোনো পুরুষ প্রতারিত হলে সেক্ষেত্রে আইনত কোনো বিধি-বিধান নেই।

পরকীয়া আইনত অপরাধ। পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী পরকীয়া একটি ব্যভিচার এবং যে ব্যক্তি কোনো বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে অপকর্মে লিপ্ত হয়, তবে এই ব্যক্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কিন্তু নারী অবিবাহিত আর পুরুষ বিবাহিত হলে ওই নারী ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০’ এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী প্রতিকার দাবি করতে পারে।

অপ্রাপ্ত বয়স্কদের প্রেমও আইন সম্মত নয়। শিশু আইন ২০১৩ এর ৪ ধারা অনুযায়ী অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের সবাই শিশু। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের আইনত নাবালক বলা হয় এবং কোনো নাবালক বা নাবালিকা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আইনত ক্ষমতা নেই। এদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধু অভিভাবকদের। আবার নারী ও শিশু নির্যাতন ২০০০ আইনের ৯ (১) ধারা অনুযায়ী কোনো নারী, যার বয়স ১৬ এর বেশি নয়, তার সঙ্গে কোনো পুরুষ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তাও আইনত অপরাধ ও ধর্ষণ বলে গণ্য হবে।

প্রেমকে আইনত ভিত্তি দেওয়া অসম্ভব। ভিত্তি দেওয়া হলে তা আর প্রেম থাকে না। বিয়েতে রূপান্তরিত হয়। প্রেমের সম্পর্কে আইনত বৈধতা দিতে হলে রাষ্ট্রীয় আইন মতে চুক্তি হতে হবে, সেক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সহমত, চুক্তি পত্র, নিবন্ধন এবং সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রয়োজন পরে। বিয়ের সম্পর্কেও এসব শর্ত থাকে। 

প্রেমের আইনত বৈধতা মানেই বিয়ে। এটিও বাল্যবিবাই নিরোধ আইন ২০১৭ এর ২ ধারা অনুযায়ী হতে হবে। আর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে ইসলামে বিয়ে উপযোগী নারী ও পুরুষের বিয়ে বহির্ভূত প্রেমের সম্পর্ক নিষিদ্ধ। কিন্তু ইসলাম কিংবা অন্য ধর্ম অনুযায়ী বিবাহকেই নারী ও পুরুষের সম্পর্কের জন্য বৈধতা করা হয়েছে। 

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা/আজহার/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়