ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘মা পাশে না থাকলে জীবন প্রদীপটা নিভে যেত’

মাহফুজা আক্তার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ১২ মে ২০২৪  
‘মা পাশে না থাকলে জীবন প্রদীপটা নিভে যেত’

মায়ের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই আনন্দের। মায়ের ভালোবাসা, মায়ের ডাক, মায়ের আদরের কোনো তুলনা হয় না। সৃষ্টিকর্তার পর এ মানুষটাই আমার সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে কাছের। 

আমার মা একজন গৃহিণী। গৃহিণী বললে ভুল হবে, তিনি গৃহকর্ত্রী। বাবা হারানো দুটি সন্তানকে ১২ বছর ধরে যিনি বুকে সযত্নে আগলে রেখেছেন তিনি আমার মা। মা দিবসে মা’কে নিয়ে মধুর স্মৃতি লেখার মতো তেমন স্মৃতি আমার নেই। ছোটো থেকে বরাবরই মা’কে একটু ভয় পেতাম। ভয় থেকেই হয়তো একটু দুরত্বও ছিল। তবে আমার জীবনের কিছু খারাপ ও ভালো সময়ে মা’র পাশে থাকা বিষয়টি আমি কখনো ভুলবো না। 

অ্যাডমিশনের সময় প্রথমবার যখন কোথাও চান্স হলো না, সবাই অনেক কটু কথা শুনিয়েছিল। অনেক খারাপ সময়ের মধ্যে ছিলাম। ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দেখতাম, যেখানে অনেকে নিজেদের বাবা-মা’কে নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা বলতো। অনেককে দেখেছি আত্মহত্যা করতে।

তখন আমার মাথায়ও বাজে চিন্তা আসতো। মা পাশে না থাকলে হয়তো জীবন প্রদীপটা তখনই নিভে যেত। যখন ভীষণ কান্না করতাম, মা বলতেন, ‘মন খারাপ করিস না, আমি আছি তো। পরেরবার হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।’

এই ‘আমি আছি তো’ কথাটায় যেন সেদিন সারা দুনিয়া পেয়েছিলাম। সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার। আমাকে আমার মায়ের জন্য হলেও পারতে হবে, মায়ের কথার মর্যাদা রাখতে হবে। মায়ের সাহস জোগানো, পাশে থাকা, ভালোবাসায়, দোয়ায়-ই আমি আজ এতোদূর আসতে পেরেছি। এই মানুষটা না থাকলে হয়তো কবেই শেষ হয়ে যেতাম।

আমার মায়ের সঙ্গে সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত ছিল সেদিন, যেদিন আমি আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে টপ পজিশনে জায়গা করে নেওয়ার সংবাদ পেয়েছিলাম। আম্মু সেদিন তার আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তার। আমাকে জড়িয়ে ধরে তিনি অনেক কেঁদেছিলেন সেদিন, সুখের কান্না। 
আমি সেদিন উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, মা পাশে থাকলে আমি বিশ্বকেও জয় করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ্।

২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা। রাজশাহী রেলস্টেশনে অঝোরে কান্না দেখে সবাই ভুত দেখার মতো তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। একজন পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যেতে বলছিলো, ‘পাগল নাকি, একা একা বসে কাঁদছে।’

সেদিন পাগলের মতোই কাঁদছিলাম। কারণ আমার মা’কে বিদায় দিয়েছি মাত্র। যে মা’কে ছাড়া ঘুম আসে না, যে মা দিনে দু’বেলা খাইয়ে না দিলে খেতে ইচ্ছে করে না, সেই মা’কে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছি। আর থাকা হবে না তার সঙ্গে। তৃষ্ণার্ত পাখির মতো মা সেদিন তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে, যেন প্রাণ ভোমরা রেখে যেতে চাইছেন না। ট্রেন চালককে হয়তো আকুতি করে বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘আরেকটু সময় দিন, আমার মেয়েটাকে আরেকটু প্রাণ ভরে দেখি।’

আমি কান্না চেপে রেখে মাকে বলেছিলাম, ‘চিন্তা করো না মা, বাড়ি পৌঁছে কল দিও।’ ইচ্ছে করছিল বলতে, যেও না মা, তোমায় ছেড়ে তোমার মেয়েটা এতোদূর কিভাবে থাকবে...!

আজ মা দিবসে আমার মা পাশে নেই। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে বসে মায়ের স্মৃতিচারণ করছি। মা কাছে নেই বলেই হয়তো আজ এতোটা সাহস পাই না, ভরসা পাই না। তবে যেখানেই থাকি বা যেখানেই যাই প্রতিটি মুহূর্তে আমি মায়ের স্পর্শ অনুভব করি। যে স্পর্শে থাকে অসীম স্নেহ, মায়া ও ভালোবাসা। থাকে মুগ্ধতার শীতল পরশ। মায়ের এ স্পর্শের কারণেই হয়তো আমি ধীরে ধীরে পূর্ণ হয়ে উঠছি।

মা’কে কখনও ঘটা করে ভালোবাসার কথা বলা হয়নি। কখনও মুখ ফুটে বলার সাহস পাইনি আসলে। মা’কে আজ ভীষণ বলতে ইচ্ছে করছে, ‘তোমাকে তোমার মেয়ে অনেক ভালোবাসে। জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়