ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘এ শহরে জড়িয়ে ধরে গল্প বলার মতো কেউ নেই, মা’

সায়মা আফরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ১২ মে ২০২৪   আপডেট: ১৭:৫৩, ১২ মে ২০২৪
‘এ শহরে জড়িয়ে ধরে গল্প বলার মতো কেউ নেই, মা’

মা একটি অক্ষর, একটি শব্দ। অথচ কি বিশাল তার ব্যাখ্যা, যা হাজারটা শব্দেও শেষ হবে না। মা’কে কখনো সংজ্ঞায়িত করা যায় না, আসলে তার কোনো সংজ্ঞা হয়-ই না। অন্ধকার এক বিশাল আকাশের একমাত্র শুকতারা মা। কি অদ্ভুত তার মায়া। মা মানেই ভালোবাসা, যত্ন, মমতা, দায়িত্ব। সে একটাই একশো। মা মানে প্রতিটা মেয়ের ভরসা, মা মানেই সুখ আর শক্তি।

ছোট থেকে মায়ের শাসন আর ভালোবাসায় বড় হয়েছি। আমার ছোট ছোট ইচ্ছে, স্বপ্ন, আবদার তিনি সবসময়ই মনে রাখেন। সবসময় সব পরিস্থিতিতে আমার পাশে থাকেন। আমার বিষন্নতা, একাকিত্বের সঙ্গী তিনি। তার মুখ দেখলে কোটি কোটি কষ্টও সুখে পরিণত হয়।

পড়াশোনার জন্য বাড়ি ছেড়ে আসার পর প্রথম অনুভব করি মা আসলে কি, কেমন তার মায়া, তার ভালোবাসা, কেমন হয় এ সম্পর্কের বিশালতা। জীবনের প্রতিটি সময় তার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে তার হাসিমুখ আর কষ্টের কথা। তার পুরো জীবন জুড়ে শুধু পরিবার, নিজের জন্য কোনো জায়গা ফাঁকা নেই। আমাকে নিজ হাতে গড়ে তোলেন তিনি। বাবা চলে যাওয়ার পর, তিনি পুরো পরিবারকে সামলাচ্ছেন। এক কথায় তিনি মহীয়সী।  

আমার জীবন নিয়ে কোনো উপন্যাস লিখলে তার প্রতি পাতায় মা থাকবে। আমার জীবনই তো তুমি, মা। ছোট থেকে সবসময় তোমাকে পাশে পেয়েছি, আমার পরীক্ষা আমার থেকে বেশি চিন্তা করো তুমি। আমার কাছে তুমি মানেই সাহস। সব ব্যর্থতায় আরও একবার উঠে দাঁড়ানোর শক্তি, অনুপ্রেরণা। যখনই মনে হয় জীবন থেকে হেরে গেছি, তখনই তোমার কথা মনে পড়ে। অন্য রকম একটা শক্তি পাই মা। আমার হাজারটা রাগ সহ্য করে অনেক যত্নে বড় করেছো। তোমাকে কতটা ভালোবাসি কখনোই বলা হয়ে উঠেনি।  

আমার জীবনের প্রতিটি সফলতার কৃতিত্ব তোমার। তোমার অনুপ্রেরণায়ই আমার সব অর্জন। কখনো আমাকে একা হতে দাওনি। আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, তোমার উপর কতটা নির্ভরশীল- এ জাদুর শহরে না আসলে কখনোই বুঝতে পারতাম না। দিন শেষে তোমার সঙ্গে গল্প করা, তোমাকে জড়িয়ে নির্ভয়ে ঘুমানো বড্ড মিস করি। এ জাদুর শহর থেকে তোমার মায়ার নগরীতে যাওয়ার আগে আমার কত কত স্বপ্ন থাকে, কি কি করবো, তোমাকে কি কি বলবো, কত কিছু রান্না করতে বলবো।

বাড়ি যেতে যেতে যতই ক্লান্ত হই, তোমার মুখ দেখলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তোমার সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায় তুমি একটা সরলতার প্রতিমা। এতো এতো জটিল ধাঁধা নিমিষেই শেষ করে দাও তুমি। হাজারটা ভুলের জন্য কখনো মাফ চাওয়া হয়নি। তাও তুমি আমাদের ভুলগুলো সবসময়ই মাফ করে দিয়েছো।

মনে পড়ে, সেই আমাদের বিকেলের গল্পের কথা, গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসতাম আমরা। কত সহজেই তখন তোমাকে হাসানো যেত, আবার রাগানোও যেত। তখন তোমার কত কথা, কত স্মৃতি শোনা হতো। আর তুমিও আমার সব অকাজের কথা শুনতে আর হাসতে। এ শহরে এমন কেউ নেই মা, যাকে তোমার মতো করে গল্প বলা যায়। প্রচণ্ড একা লাগে, কান্না পায়। তা-ও তোমার জড়িয়ে ধরতে পারি না। মা তোমাকে বড্ড ভালোবাসি, তোমার মেয়ে তোমাকে অনেক মিস করে। সে বড় হয়নি এখনো, তোমার জন্য ছোটই আছে। মাঝে মাঝে ভাবি, তোমাকে ছাড়া আমার কি হবে, আমি কি করে বাঁচবো? এ পৃথিবীর নিয়ম তো বড্ড অদ্ভুত।

তোমাকে কখনো ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি মা। আজ বলি তবে, সবসময় আমার পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সব লড়াইয়ে সাহস দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। সব বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য ধন্যবাদ। যত্ন করে আমাকে বড় করার জন্য ধন্যবাদ। তোমার অনেক ঋণ মা, যা আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না।

মা, কখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পাড়লে তোমাকে সব সুখ কিনে দিবো। মনের মতো করে তোমায় সাজাবো। তোমার সব চাওয়া পূরণ করবো মা। তোমার সব স্বপ্ন একদিন পূরণ হবে মা।

তোমাকে আমি আলাদা করে কখনোই বিশ্লেষণ করতে পারবো না। কারণ আমি মানেই তুমি। তার তোমার কথা কখনোই গুছিয়ে বলতে পারি না। তুমি মানেই আমার কাছে অগোছালো একটা বই, যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। তোমার মমতায় বাঁচিয়ে রেখো মা।

ভালোবাসি তোমাকে মা।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়