ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘আমি আর মা খুব ভালো বন্ধু’

জয়া পালিত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ১২ মে ২০২৪  
‘আমি আর মা খুব ভালো বন্ধু’

দেবী দুর্গা ১০ হাতে সব সামলান। আমার মায়ের দুটি হাতই যেন ১০টা হাতের সমান। আমি ছোটবেলা থেকেই মাকে আমার আদর্শ মনে করি। সবসময় ছোট ছোট জিনিস লক্ষ্য করতাম খুব মনোযোগ দিয়ে। মায়ের কাছে না বলতে কোন শব্দ নেই। অসীম ধৈর্য এবং সাহসের অধিকারীনী তিনি। যখনই এ কাজ আমার দ্বারা হবে না মনে হয়, ঠিক তখনই চোখ বুজে মায়ের একটা কথাই স্মরণ করি, ‘চরিত্র ঠিক রেখে যা কিছু করতে চাও, পৃথিবীতে না বলতে কোনোকিছুই নেই। যদি ইচ্ছা সৎ থাকে, মনে বিশ্বাস থাকে, তাহলে তুমি বিশ্বের সব কিছুই জয় করতে পারবে।’ 

মা টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন এবং নিজে হারমোনিয়াম কিনেছিলেন। মায়ের গান ও লেখালেখির অনেক শখ ছিল। সবগুলোই মা আমাকে শিখিয়েছেন, তিনি যেগুলো পারেননি শেষ করতে। মা-ই আমার সবকিছুর গুরু। 

ছোটবেলা থেকে মা’কে কখনো বসে থাকতে দেখিনি। স্কুলের ছুটির সময় পর্যন্ত কিভাবে সময়টা কাজে লাগাবেন সব সময় সেটা ভাবতেন। এভাবে একটু একটু করে হয়ে উঠলেন একজন উদ্যোক্তা। সবকিছু মিলে আমার মায়ের উদ্যোক্তা হওয়ার বয়স আজ ১০ বছর। একাধারে সংসার সামলে ব্যবসা করা চাট্টিখানি কথা নয়।

অক্লান্ত পরিশ্রম নিয়ে বাসায় ফিরলেও আমাদের সময় দিতে একটুও ভুলতেন না। এ মানুষটাকে দেখে আমি মনে অনেক শক্তি পাই, তাকে মনে ধারণ করি। মাকে পেলে আমি বাবা, ভাই- সব ভুলে যেতে পারি। কথাটা কেমন শোনালো জানি না। কিন্তু মায়ের জন্য সব পারি।

তাকে ছাড়া কোনোদিন এক রাত কোথাও থাকিনি। আমি যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পেয়ে ঢাকায় এলাম একটা রাতও ঘুম হয়নি ঠিকমতো। চিন্তা হবে ভেবে মাকে আমি কখনোই কিছু বলতে চাই না। কিন্তু মা যেন কিভাবে সবকিছু বুঝে যান। আমি যা যা খেতে পছন্দ করি, সেগুলো থাকা সত্ত্বেও দ্বিগুণ করে ব্যাগ ভর্তি করে পাঠিয়ে দেন সব। আমি মায়ের মত ওতো সাহসী নই। তবে তিনি আমাকে এমনভাবে আগলে রাখেন, যাতে কোথাও বা কারো কাছে কিছু নিয়ে ঠেকতে না হয়। সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয় হচ্ছে, আমি আর মা খুব ভালো বন্ধু। আমি সবকিছুই মাকে অকপটে বলে দেই, আমার ভুলভ্রান্তি যা কিছু এতে আমার প্রতি মায়ের ভালোবাসা কিন্তু কমে না।

মা সবকিছুর উর্ধ্বে। কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করেই নিজের সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসেন। কোনোকিছু দিয়েই হয়তো মায়ের ভালোবাসার মূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। সৃষ্টিকর্তা মাকে সৃষ্টি করেছেন নিজেরই এক অন্যরূপ দিয়ে। সন্তানদের জন্য মা নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকেন। মা আমাদের সব কষ্ট. দুঃখ, ভয় দূর করে আমাদের বটগাছের মতন আগলে রাখেন। ভগবানের কাছে একটাই চাওয়া, মা যেন সবসময় সুস্থ্য থাকেন, মায়ের সব ইচ্ছা, স্বপ্ন যেন আমি পূরণ করতে পারি।

মা আমার কাছে সব। পুনর্জন্ম বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেখানেও আমি আমার মায়ের মেয়ে হয়ে জন্মাতে চাই।

আমি চাই পৃথিবীর সব মায়েরা ভালো থাকুক। সব মায়েদের  প্রতি আমার অনেক সম্মান আর ভালোবাসা রইলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়