ফুটবল খেলা নিয়ে গবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৩০
গবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তিনটি বিভাগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রথমে আইন ও বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (বিএমবি) এবং পরে বিকেলে আইন এবং রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ফুটবল টুর্নামেন্ট স্থগিত করেছে গবি প্রশাসন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আইন বনাম বিএমবি বিভাগের মধ্যকার ফুটবল খেলা শুরু হলে ১৫ মিনিটের মাথায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। এতে বিএমবি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায় এবং দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহতদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ক্রীড়া কমিটি উক্ত ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিএমবি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল। একপর্যায়ে তা মারামারিতে রূপ নেয়। আমরা দেখছিলাম আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের পেটানো হচ্ছে। মারামারি থামাতে গেলে আমাদের উপরও হামলা করে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনা শিথিল হওয়ার পর ঘণ্টা না পেরোতেই দ্বিতীয় দফায় রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, প্রথম ঘটনার পর বিএমবি বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগ করলেও আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠেই অবস্থান নেন। পরবর্তী ম্যাচ রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সঙ্গে মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। খেলোয়াড়রা মাঠে এসে মাঠ ছেড়ে দিতে বললে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাঠ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির শুরু হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রিদয় বলেন, বিএমবির খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগের পরও আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠে ফুটবল খেলছিল। রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী গোলবারের পাশে বসে ছিল। বল থেকে গায়ে পানি ছিটে আসলে আইনের খেলোয়াড়দের ধীরে খেলতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং তর্ক শুরু করে। তর্কের এক পর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের মারধর শুরু করে।
দ্বিতীয় দফায় মারামারির ঘটনায় দুই বিভাগের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত শিক্ষার্থীদের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহাগ রানা বলেন, এখন পর্যন্ত ২৫-৩০ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে দুজনের ফ্রেকচার ধরা পড়েছে। একজনের মাথায় সেলাই দেওয়া হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।'
মারামারির ঘটনায় আহত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল হক বলেন, মাঠের উত্তর পাশের গোল বারের কাছে আমরা ছিলাম। খেলার এক পর্যায়ে আমাদের আইন বিভাগের আমিনুল ইসলাম (খেলোয়াড়) স্লিপ করে। এ সময় বিএমবি ডিপার্টমেন্টের একজন তাকে আঘাত করার জন্য এগিয়ে আসে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীকে প্রশ্নের জের ধরে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। ঘটনাচক্রে আমি নিজেও আহত হয়ে যাই। প্রায় ২ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকার পর রেফারিসহ সংশ্লিষ্টরা আইন বিভাগের সঙ্গে কথা না বলে শুধু বিএমবি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে খেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানান। কিন্তু আইন বিভাগ অবশিষ্ট চার মিনিট পেনাল্টি কিকে খেলার কথা জানায়। কিন্তু বিএমবি তা প্রত্যাখ্যান করে।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকদের নির্দেশে চুপ হয়ে যায় এবং মাঠের এক কোণে ফুটবল নিয়ে খেলা করতে থাকি। সেখানে রাজনীতি ও প্রশাসনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। দৌঁড়ানো দেখে তাদের একজন নিষেধ করলে তা না শোনায় এবং কথায় প্রতিউত্তর করায় আবার একটু বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় তারা আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে একই বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরা এসে হামলে পড়েন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনায় আইন বিভাগের নারী শিক্ষার্থীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। এমনকি আইন বিভাগের শিক্ষকদেরও হুমকি প্রদান করা হয়েছে।
সার্বিক ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা জানান, আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীকে কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না। কোন শিক্ষার্থী করলো সেটি দেখা হবে না। মাঠের মধ্যে যা হয়েছে, সেটা দেখার জন্য রেফারি ছিলেন। তবে মাঠের বাইরে যা ঘটেছে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রশাসনের। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধী কখনো কারও আত্মীয় হতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসন খেলা স্থগিত করেছে। আগামীকাল মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা সবার আগে। এই পরিস্থিতিতে খেলা চালানো কঠিন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, আজকের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। খেলার মাঝে খেলোয়াড়দের উপর হামলার বিচার হবে। আমরা আগামীকাল এ বিষয় নিয়ে বসবো। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছে এবং চিকিৎসা নিয়েছে, সবার সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সব খরচ বহন করবে।
/সানজিদা/মেহেদী/