ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাকৃবির মাটিতে শুয়ে আছে তিন বীর

মো. লিখন ইসলাম, বাকৃবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০৮:৫২, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
বাকৃবির মাটিতে শুয়ে আছে তিন বীর

একটি কালো রাত, মুহুর্মুহু গুলি, আর্তনাদ, চিৎকার, উৎকণ্ঠা, আগুন, লণ্ডভণ্ড একটি পুরো জাতি এবং একটি ভুখণ্ড। মানবজাতির ইতিহাসে নিকৃষ্টতম ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে। পাক হানাদার বাহিনী জঘন্যতম উদাহরণ সৃষ্টি করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র ও অসহায় বাঙালিদের উপর। ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা, অগ্নিকাণ্ড, ধর্ষণের মতো এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করেনি।

কিন্তু অত্যাচার, অবিচার, চলমান গণহত্যার মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় পুরো জাতি। অকুতোভয় মনোবল, হার না মানার প্রতিজ্ঞা ঐক্যবদ্ধ করে পুরো জাতিকে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার অমোঘ ঘোষণায় জাতির সূর্য সন্তানেরা নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে। তাদের চোখে মুখে একটাই নেশা; দেশমাতৃকার মুক্তি, একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।

এ দেশে যতবারই হায়েনারা স্বৈরাচার ও দাসত্ব কায়েম করতে চেয়েছে, সবার প্রথমে দেশের ছাত্র-সমাজ তার মুখ্যম প্রতিবাদ করেছেন। ভ্যানগার্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে পুরো জাতির মুক্তির আন্দোলনে। ১৯৭১ সালেও মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের ছাত্র-সমাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকে শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা একে একে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে ছিল না। দেশ মাতৃকার ঘোর বিপদে চুপচাপ বসে থাকা যায় না। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জীবন বিলিয়ে দেওয়াই অতি সম্মানের, যার কোন প্রতিদান হয় না।

বাকৃবিতে নামে, বেনামে মুক্তিযুদ্ধে অনেকে শহীদ হন। তার মধ্যে অন্যতম শহীদ এনএম নাজমুল আহসান, শহীদ শামসুল হক তালুকদার ও শহীদ মো. জামাল হোসেন। যাদের নামে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলের নামকরণের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখার একটা ছোট্ট প্রয়াস করেছেন।

শহীদ শামসুল হক তালুকদারের পিতা ছিলেন আখতারুজ্জামান তালুকদার। এ অকুতোভয় বীর কুমিল্লা (বর্তমানে চাঁদপুর) জেলার, চাঁদপুর উপজেলার ছোট সুন্দর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৪-১৯৬৫ শিক্ষাবর্ষে বাকৃবিতে কৃষি অর্থনীতি অনুষদে ভর্তি হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য গ্রামের বাড়ি যান এবং অন্যতম সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সনের ১০ আগষ্ট মহান ছাত্র নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠককে তার নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পাক সেনারা হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।

শহীদ এনএম নাজমুল আহসান ১৯৪৯ সালে ২১ জানুয়ারি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তারাগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরী অনুষদে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি সৃষ্টিশীল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ছাত্র রাজনীতি ও ক্রীড়াঙ্গণে সক্রিয় ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি ছিলেন ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর কোম্পানির কোম্পানি কমান্ডার। ৬ জুলাই নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতী, শ্রীবর্দী ও বকশীগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় অগ্রসরমান পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তার নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ কাটাখালী ব্রিজ ধ্বংস করা হয়। এ সব অপারেশনের পর পাক-সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ২২ বছর বয়সী এ সাহসী বীর শাহাদাত বরণ করেন।

শহীদ এন এম নাজমুল আহসানের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান এবং মহিমান্বিত আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা পুরষ্কার (মরণোত্তর) প্রদান করে।

বাকৃবির অন্যতম শহীদ জামাল হোসেন ১৯৫৩ সালের ১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার চামুরিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মো. জামাল হোসেন ১৯৭১ সনে স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ওই বছরই ১৬ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতীতে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।

ঢাকা/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়