ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩২

আ.লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ: ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে উল্লাস

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:০৮, ১১ মে ২০২৫   আপডেট: ১৯:২৭, ১১ মে ২০২৫
আ.লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ: ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে উল্লাস

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ঘোষণার পরপরই বাঁধভাঙা উল্লাস শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

শনিবার (১০ মে) রাত ১১টার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে বের হয়ে আনন্দ মিছিল শুরু করেন। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)

আরো পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খবরে শনিবার (১০ মে) রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে আনন্দ মিছিল শুরু করেন চবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি এফআর রহমান হল অতিক্রম করে শহিদ মিনারে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘এই মুহূর্তে খবর এল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘লীগ নিষিদ্ধ চায়নি যারা, স্বৈরাচারের সঙ্গী তারা’, ‘ছি ছি হাসিনা, লজ্জায় বাঁচি না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

সমাবেশে শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, “৫ আগস্ট হাসিনার পতন হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মুখে আজ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশে আর কোনো স্বৈরাচার যেন মাথাচাড়া না দিতে পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।”

ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক নাইম বলেন, “আজ আমাদের বিজয়ের দ্বিতীয় ধাপ পূরণ হয়েছে। প্রথম ধাপ ৫ আগস্টের বিজয়। তৃতীয় ধাপ হাসিনার ফাঁসি। চূড়ান্ত ধাপ, দেশকে আমূল সংস্কার করা। এখন থেকে আওয়ামী লীগের অনলাইন-অফলাইনে কোনো ধরনের কার্যক্রম দেখলে সরাসরি আইনের হাতে তুলে দিবেন। আজ দেশের বুকে আওয়ামী লীগের কবর রচিত হলো।”

এদিকে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে শোকরানা নামাজ পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে তারা ক্যাম্পাসে মিষ্টি বিতরণ করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে শনিবার (১০ মে) দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে মিছিল বের করেন রাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল প্রদক্ষিণ করেন তারা। পরে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মূল ফটকে অবস্থান নেন তারা।

এ সময় ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, আওয়ামী লীগ নো মোর’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, ‘ধর ধর লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রাবির সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, “আজ আমাদের বিজয়ের দিন। বাংলাদেশে আবার আওয়ামী লীগের মতো যদি কোনো দল হায়েনা হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, তাদেরও বাংলাদেশের জনগণে উচ্ছেদ করবে। অন্তবর্তীকালীন সরকার বলেছেন ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন। আমরা জানাতে চাই ৩০ দিন যেন ৩১ দিন না হয়।”

রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, “আওয়ামী লীগ ১৭ বছরে যে ফ্যাসিজম করেছে, তারা এ বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খুশিতে সারা বাংলাদেশে আজ বিজয় মিছিল বের হয়েছে। এখনো যেসব দালালদের বিচার করা হয়নি, তাদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। যেসব দালাল শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে আওয়ামী পুর্নবাসনের চেষ্টা করে, তাদের শিক্ষার্থীরা অবাঞ্চিত ঘোষণা করবে। সিপিপি, বাসদ, জাসদসহ সব দালাল সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোবিপ্রবি)

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোবিপ্রবিতে একটি আনন্দ মিছিল বের করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মূল গেটের সামনে গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কে গিয়ে শেষ হয়।

গোপালগঞ্জ বরারবই আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা। তবে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলার কোথাও প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়নি। বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটের মাধ্যমে জয় লাভ করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাল্টে যায় পুরো চিত্র। হামলা-মামলার ভয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন দলটির নেতা কর্মীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণায় শনিবার (১০ মে) সাড়ে ১১টায় জাবির বটতলা এলাকায় শিক্ষার্থীরা মিষ্টি বিতরণ করেন। পরে তারা আনন্দ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে গিয়ে সমাবেশ করেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন আয়ান। 

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রজনতা আজ উচ্ছ্বসিত। আমরা মনে করি দীর্ঘদিন ধরে এই দলের শাসনকালে দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয়করণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা শিক্ষাঙ্গনকে আবারো শান্তিপূর্ণ, গঠনমূলক এবং পাঠভিত্তিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।”

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা সাময়িক খুশি কিন্তু এটা চূড়ান্ত খুশি না। আমরা খুশি হব সেদিন, যেদিন আওয়ামী লীগ একটি বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষিদ্ধ হবে।  যদিও ৫ আগস্টের পর জনতার রায়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। আমরা ২০১৩ সলের শাহবাগের মতো কোনো ফ্যাসিস্ট নজির স্থাপন করতে চাই না। আমরা চাই আওয়ামী লীগকে যাতে সুষ্ঠু বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়।”

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার খবরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা।  শনিবার (১০ মে) রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটকে এই আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।   

এ সময় তারা ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ’এইমাত্র খবর এলো, আওয়ামী লীগ ব্যান হলো’, 'হৈই হৈই রই রই, আওয়ামী লীগ তুই গেলি কই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের সদস্য সচিব ও বেরোবি শিক্ষার্থী রহমত আলী, বেরোবি শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রনেতা মো. ইয়ামিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করেছে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১০ মে) দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে থেকে মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারের সামনে মিছিলটি শেষ হয়।  

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘এই মুহূর্তে খবর এল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘যমুনা থেকে খবর এল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

আনন্দ মিছিল শেষে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরিফ, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নোয়াখালী শাখার সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি আমিন, জুলাই আন্দোলনে আহত নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী জাফর প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়