ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সোনালী লাইফের লভ্যাংশ প্রদানে প্রতারণা, ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৬, ৬ নভেম্বর ২০২১  
সোনালী লাইফের লভ্যাংশ প্রদানে প্রতারণা, ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ

শেয়ারবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূতভাবে লভ্যাংশ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।

কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছর পর্যন্ত সময়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আগে সংশ্লিষ্ট শেয়ার ধারণকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ফলে আইপিও পরবর্তী কোম্পানিটির শেয়ারধারণ করা সাধারণ শেয়ারহোল্ডার প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে প্রতারণা বলে মনে করছেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডারা।

আরো পড়ুন:

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এমন ধরনের লভ্যাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের বিদ্যমান বিধি বিধান লঙ্ঘন বলে মনে করছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় এ ধরনের কার্মকাণ্ডের জন্য কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এরই ধরাবাহিকতায় সম্প্রতি আইপিও’র পূর্ব শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য বলে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছে ডিএসই।

চিঠিতে ডিএসই উল্লেখ করেছে, গত ৭ অক্টোবর সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে আইপিও’র পূর্ব শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স শেয়ারবাজারের বিদ্যমান বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করে লভ্যাংশ ঘোষণা ও প্রদান করেনি। আইপিও’র পূর্ব শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়ে আপনাদের প্রদানকৃত ব্যাখ্যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধির অন্তরায় ও ক্ষতিকর।

তথ্য মতে, আইপিও পক্রিয়া সম্পন্ন করে চলতি বছরের ৩০ জুন দেশের উভয় শেয়ারবাজারে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের লেনদেন শুরু হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ১০ জুলাই ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সভা আয়োজন করে। ওই সভায় কোম্পানিটির পর্ষদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ ও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য ২ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে কোম্পানিটি এ সংক্রান্ত মূল্য সংবেদনশীল তথ্যে (পিএসআই) প্রকাশ করে। তবে ওই পিএসআইতে গত বছরের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ কেবল ২০২০ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বা আইপিও পূর্ববর্তী শেয়ার ধারণকারীরা পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, বাকি ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ গত ৪ আগস্ট রেকর্ড ডেটের দিন শেয়ার ধারণকারী সব শেয়ারহোল্ডার পাবেন বলে জানানো হয়। 

তবে তাৎক্ষণিকভাকে এ বিষয়টি শেয়ারহোল্ডারসহ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কারোই দৃষ্টিগোচর হয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি অন্যান্য সব কোম্পানির মতোই সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশ ঘোষণার তথ্য ডিএসই’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ডিএসইর ওয়েবসাইটে জানানো হয়, ঘোষিত ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইপিও পূর্ববর্তী শেয়ার ধারণকারীদের ব্যাংক হিসাবে ঘোষিত লভ্যাংশের অর্থ গেলেও, সাধারণ শেয়ারহোল্ডারা কিছুই পাননি। এরপরই সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণার অভেযোগ উঠে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের লভ্যাংশ প্রদানের বিষয়ে ইতিমধ্যে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএসইসি ও ডিএসই। তবে কোম্পানিটির প্রদান করা ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।  

এদিকে, বিএসইস’র নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় লভ্যাংশ সংক্রান্ত যে ঘোষণা করা হবে, তা রেকর্ড ডেটের দিন শেয়ারধারণ করা সব শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন। এক্ষেত্রে রেকর্ড ডেটের শেয়ারহোল্ডারদের কোনো অংশকে বাদ দিয়ে লভ্যাংশ প্রদান করার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের বিধি-বিধান যথাযথভাবে পরিপালন না করে লভ্যাংশ ঘোষণা ও প্রদান করেছে। এ বিষয়ে তাদেরকে ডিএসই চিঠি দিয়েছে। সুতরাং কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সোনালী লাইফের কোম্পানি সচিব মো. রাফি-উজ-জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিমা আইন অনুসরণ করে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যাখ্যা প্রদান করেছি।’

এদিকে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ঠকাতে কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে। সেসব কোম্পানি এ ধরনের অপকর্ম করছে বা ইতোপূর্বে করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়