ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ফের উড়তে ইউনাইটেড এয়ারের পর্ষদের ৪ সুপারিশ

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৪, ১৮ অক্টোবর ২০২২  
ফের উড়তে ইউনাইটেড এয়ারের পর্ষদের ৪ সুপারিশ

পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের জন্য অপেক্ষমান ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। ১ লাখ ৬০ হাজার প্রান্তিক বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় দীর্ঘ ৬ বছর ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা কোম্পানিটিকে পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তবে, সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং তহবিল তছরুপের কারণে কোম্পানিটিকে কোনোভাবেই দাঁড় করানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও ইউনাইটেড এয়ারকে ফের আকাশে ওড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন বিএসইসির মনোনীত পুনর্গঠিত পর্ষদ। এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের সহযোগিতাসহ চারটি সুপারিশ বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করে ইউনাইটেড এয়ারের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ।

সম্প্রতি বিএসইসির কাছে ইউনাইটেড এয়ারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারে কাছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মোট ৩৫৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫১ টাকা পাওনা আছে। এ টাকা মওকুফের জন্য ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি। একই সঙ্গে কোম্পানিটির এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) নবায়ন করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে, ১ লাখ ৬০ হাজার বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষার্থে বেবিচকের মূল পাওনা বাদে সারচার্জসহ অন্যান্য সকল পাওনা মওকুফ করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় বিএসইসি। তবে, কোম্পানিটি বন্ধ হওয়ার কারণ, বন্ধ হওয়ার পেছনে কারা জড়িত ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে বিএসইসিকে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় বকেয়ার পুরো টাকা ইউনাইটেড এয়ারকে পরিশোধ করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। এদিকে, বেবিচকও ইউনাইটেড এয়ারের বকেয়া টাকা মওকুফের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই, সার্বিক দিক বিবেচনা করে কোম্পানিটির বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চারটি সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর দাবি জানিয়েছে কোম্পানিটির বর্তমান পর্ষদ।

উনাইটেড এয়ারের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশগুলো হলো—বেবিচক কর্তৃক সমুদয় বকেয়া মওকুফ করে এয়ারলাইনটি পুনর্জীবিত করার অনুমতি দেওয়া। বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা বিভিন্ন অকেজো যন্ত্রাংশ, যানবাহন ইত্যাদি প্রাপ্য সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ কোম্পানির পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের অনুমতি দেওয়া। কোম্পানির মালিকানাধীন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উড়োজাহাজগুলো বিক্রির জন্য একটি টেন্ডার কমিটি গঠন করে তা সত্বর বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সর্বশেষ কোম্পানির রেজিস্টার্ড ও অস্থায়ী অফিসে রক্ষিত মূল্যবান ফাইলপত্র ও অন্যান্য অফিস সামগ্রী উদ্ধারে প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা প্রদান।

এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ইউনাইটেড এয়ারকে পুনর্জীবিত করে উড্ডয়ন করানো সম্ভব হবে বলে মনে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।

এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়য়ের নির্দেশে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আগের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একই সঙ্গে কোম্পানিটির আর্থিক অসঙ্গতি খতিয়ে দেখতে ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করা হবে।

কোম্পানিটির আগের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে তাহবিল তছরুপের অভিযোগ আছে। তাই, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আগের পরিচালনা পর্ষদ কারসাজির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে কমিশন।

এদিকে, স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন লঙ্ঘনের কারণে কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপটেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএসইসির কাছে নির্দেশনা চেয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়া ও বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের কারণে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মূল মার্কেট থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। একই সঙ্গে গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ আছে। দীর্ঘ সময় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এ ব্যর্থতার জন্য কোম্পানিটির সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়ী বলে মনে কমিশন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারকে ওটিসি মার্কেটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন—কাজী ওয়াহিদ উল আলম, এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন কাজী ওয়াহিদ উল আলম।

২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ওটিসি মার্কেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনাইটেড এয়ারকে ওটিসি থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে স্থানান্তর করা হবে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ১ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানিটি ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে ২১ কোটি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩১৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে। ৮২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার ৮২ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ২.৫ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১১.০৭ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৮৬.৪৩ শতাংশ শেয়ার আছে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শেয়ার সর্বশেষ ২ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

এনটি/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়