ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চুরি রোধে স্টক লট রপ্তানির উৎস নিশ্চিতের প্রস্তাব

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  
চুরি রোধে স্টক লট রপ্তানির উৎস নিশ্চিতের প্রস্তাব

রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চুরি হচ্ছে তৈরী পোশাক। এসব পোশাক কিনে স্টক লট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে চোর চক্র। এই চুরি রোধে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তির বিধান করা এবং স্টক লট রপ্তানির ক্ষেত্রে মালামালের উৎস নিশ্চিত করাসহ সরকারের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিজিএমইএ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহনকালে শত শত কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য কাভার্ডভ্যান থেকে চুরি হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন আইন প্রয়াগকারী সংস্থা এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক চুরির একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতা শাহেদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এজন্য বিজিএমইএ পরিবারের পক্ষ থেকে র‍্যাবসহ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি, তারা অনতিবিলম্বে এ চক্রের অন্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তার করবেন।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শাহেদের মতো একজন চোর কোটি কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সম্পত্তির মালিক হয়েছে এবং বছরের পর বছর বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। প্রায় বিরামহীনভাবে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শাহেদ এই অপরাধ করতে পেরেছে। দুই বছর আগে বন্দরনগরীতে দায়ের করা ছয়টি মামলায় আট মাস কারাগারে ছিল সে। কিন্তু, প্রতিবারই জামিন পাওয়ার পর সে পুরনো পেশায় ফিরে এসেছে। এই ধরনের অপরাধীরা কিভাবে এত সহজে জামিন পায়, সেটি আমাদের প্রশ্ন। এতে করে তারা পরবর্তীতে আরও গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করে না। শুধু শাহেদ নয়, গার্মেন্টস পণ্য চুরির জগতে আরও মাস্টারমাইন্ড, আরও চক্রে আছে, যারা একই কাজ করে ধরা পড়লেও প্রায় কোনো শাস্তি ভোগ না করে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এই অপরাধীদের কারণে আমাদের পোশাক শিল্প বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে হলেও এই অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে সকল সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি বহুবার আলোচনা করে এ ধরনের চুরি বন্ধ করার লক্ষ্যে আইন সংশোধনসহ কতিপয় প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পেশ করেছে, যা এখনো বিবেচনাধীন আছে।

পোশাক চুরি রোধে বিজিএমইএর প্রস্তাবগুলো হলো— ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের চলমান কাজ আগামী মার্চে মধ্যে শেষ করতে হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। কতিপয় নামসর্বস্ব কোম্পানি এসব চুরির মালামাল কিনে স্টক লট হিসেবে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। স্টক লট রপ্তানির ক্ষেত্রে মালের উৎস নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ থেকে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তাব করছি। এই চোর চক্র ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগানো এবং কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি, কাভার্ড ভ্যানের চালক-হেলপারদের ডাটাবেজ প্রস্তত করে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ফারুক হোসেন বলেন, এই চোর চক্র রপ্তানি পণ্যের কার্টন থেকে পণ্য চুরি করে সমপরিমাণ মাটি দিয়ে তার ওজন ঠিক রাখে। তাতে যেসব দেশের ক্রেতাদের কাছে এসব পণ্য যায়, তাদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ক্রেতারা আমাদের দেশের ওপর খুব বিরক্ত হয়। তারা এসব কারণে পণ্যের অর্ডার বাতিলও করেছে। তাছাড়া জরিমানার সম্মুখীনও হতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। 

তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতা এবং ব্র্যান্ডগুলো পোশাকের অনেক আইটেম অবিক্রিত থেকে মজুদ হয়ে পড়েছে। এ কারণে আমাদের অনেক পোশাক কারখানায় ওয়ার্কঅর্ডার বাতিল, বিলম্ব বা কখনও কখনও আটকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহনকালে পোশাক পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের অবশ্যই কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। কারণ, রপ্তানিমুখী পোশাক চুরির ঘটনা জাতীয় অর্থনীতিতে চুরির অন্যান্য ঘটনার তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। যদি এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে, তাহলে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।

তিনি আরও বলেন, গত দেড় বছরে সুতার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৬২ শতাংশ, কন্টেইনার ভাড়া বেড়েছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ শতাংশ, ডাইস ও ক্যামিক্যালের খরচ বৃদ্ধি ৬০ শতাংশ, গত বছরের শুরুতে মজুরি বৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ, গত ৫ বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনায় খরচ আরও বেড়েছে। অন্যদিকে, বিশ্ব জুড়ে চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ফারুক হোসেন বলেন, গত জানুয়ারি মাসে দুই দফায় বিদ্যুতের দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। অপরদিকে, ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের দামও প্রায় আড়াই গুণ বাড়ানো হয়েছে। এতে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ক্রমবর্ধমানভাবে কমছে। সরকারের কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ, বিশ্ববাজারে বিরাজমান জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের দেশে ধাপে ধাপে সহনীয় পর্যায়ে গ্যাসের দাম যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হোক। এতে নিয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সেভাবে বাড়বে না, জনগণ উপকৃত হবে, শিল্প খাত উপকৃত হবে। একই সঙ্গে গ্যাসের সিস্টেম লস কমিয়ে আনা, অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ করার জন্যও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এনএফ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়