ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

উন্নয়ন অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২২, ১ জুন ২০২৩   আপডেট: ১৬:২৩, ১ জুন ২০২৩
উন্নয়ন অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে

আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে দেশের জনগণকে আরও একটি জাতীয় বাজেট উপহার দিলো আওয়ামী লীগ সরকার। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (০১ জুন) শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে এ বাজেট পেশ করেন তিনি। এ সময় সংসদে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দীন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ অবস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  

তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এটা পঞ্চম বাজেট। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালেরও এটি পঞ্চম বাজেট।

স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি মূল স্তম্ভকে সামনে রেখে এবারের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। স্তম্ভগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রথম বাজেট বলে উল্লেখ করেন। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অর্থবছরের পুরো সময়জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার বা মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, স্মার্ট উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ, কোভিড-১৯ ও ইউক্রেইন যুদ্ধ উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকট হতে উত্তরণ, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের সফল বাস্তবায়ন, মেগা প্রকল্পসমূহের কাজ সময়মত সম্পন্ন করা; সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিখাতে ভর্তুকি সর্বোপরি উচ্চ প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত রাখাকে বিবেচনায় নিয়ে মূলত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত রাজস্ব আয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উৎস থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার এবং অন্যান্য উৎস হতে ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রস্তাবিত ব্যয়ের পরিমাণ তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১৫.২ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন: প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৫.২ শতাংশ। এখানে উল্লেখ্য, এই হার গত বাজেটে ছিল ৫.৫ শতাংশ। মোট ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং ১ লাখ ৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে নির্বাহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর আগে, তিনি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট সার্বিক রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের অগ্রগতি তুলে ধরেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে কিছুটা সংশোধন ও সমন্বয় করতে হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধিত রাজস্ব আয়, চলতি অর্থবছরের মার্চ-২০২২ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৯২ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের এ প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেটের সমান অর্থাৎ ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত সংশোধিত ব্যয়: চলতি অর্থবছরের বাজেটে সর্বমোট সরকারি ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয়ের সার্বিক অগ্রগতি বিবেচনায় সংশোধিত বাজেটে সরকারি ব্যয় ১৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা হ্রাস করে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশোধিত বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন: চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি প্রস্তাব করা হচ্ছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৫.১ শতাংশ। উল্লেখ্য, মূল বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল জিডিপির ৫.৫ শতাংশ। মোট ঘাটতির ১ লাখ ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ৮৭ হাজার ৮২ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নির্বাহ করার প্রস্তাব
করা হয়েছে।

ঢাকা/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়