ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বাজেট প্রতিক্রিয়া: কর আদায় ও মূল্যস্ফীতি ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৭, ১ জুন ২০২৩   আপডেট: ২১:১৪, ১ জুন ২০২৩
বাজেট প্রতিক্রিয়া: কর আদায় ও মূল্যস্ফীতি ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ

‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে যা ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করা এবং মূল্যস্ফীতি ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। আর আওয়ামী লীগ সরকারের ২৪তম বাজেট। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের টানা পঞ্চম বাজেট।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট পেশকালে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা প্রচেষ্টা চলছে। এসব সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে। তাই, বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করছি। আর নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে চলতি অর্থবছরের মতোই ৭.৫ শতাংশ।

তবে বাজেট প্রতিক্রিয়া অর্থনীতিবিদরা কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করা এবং মূল্যস্ফীতি ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন।

অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এবার অনেক বড় বাজেট হয়েছে। উন্নয়নের জন্য অনেক খাতেই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখেই সরকারের এমন বাজেট পরিকল্পনা। এটা ভালো খবর। কিন্তু এখানে কিছু বিষয় চ্যালেঞ্জ থাকবে। এগুলো সামাল দেওয়া মুশকিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। এবার বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। চলমান উচ্চ-মূল্যস্ফীতি ও বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় আদৌ ৬ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতিকে ধরে রাখা সম্ভব কি না, সেটা দেখার বিষয়। একইভাবে ঘাটতি বাজেট যা রাখা হয়েছে তাও ভাবার বিষয়। এবার ঘাটতি বাজেট রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা গত ২০-৩০ বছরে দেখা যায়নি। তাই এটা একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আমার মনে হয় এটা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব। একইভাবে যে ভাবে রাজস্ব আয় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তাও ভাবার বিষয়। কারণ বর্তমানে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। মানুষের আয় কমে গেছে। সব মিলে চ্যালেঞ্জ থাকবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজেটে ভালো দিক হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে। এই বেষ্টনীটি বড় রাখা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় সরকারের অনেক টানাপড়েন রয়েছে। এর মধ্যেও সরকার বিষয়টি মাথায় রেখেছে। এটা ভালো অবশ্যই ভালো দিক। আমি মনে করি এটা দরকার ছিলো এবং সরকার তা করেছে। এটা তাদের অঙ্গীকারও ছিল। অন্যদিকে বাজেটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে মূল্যস্ফীতি। এটা ভাবার বিষয়। যেভাবে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে সেভাবে বিচার করলে সরকারের অনেক বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। যার পরিমাণ অনেক। একইভাবে অভ্যন্তরীণ ঋণ হতে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণ ব্যাংকগুলোর দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তারা দীর্ঘ দিন থেকে সংকটে ভুগছে। এই ক্ষেত্রে সরকারের যেতে হবে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশি বেশি টাকা ছাপাতে হবে। এবছর যেটা করা হয়েছে। আগামীতে যদি আরও টাকা ছাপানো হয়, তাতে মূল্যস্ফীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা দেখার বিষয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির হার ৬ হওয়ার প্রত্যাশা প্রকাশ করা হয়েছে, যা উচ্চাকাঙ্খিত এবং বেশ চাহিদাপূর্ণ। গত বছর এ বিষয়ে আমরা বড় সাফল্য দেখতে পাইনি। যদি কোনও সাফল্য দেখা যেত তাহলে বুঝতে পারতাম যে সরকার এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনও নীতি বা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে আগামী অর্থবছরে ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হার বজায় রাখার লক্ষ্য অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বলে মনে হচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে এই লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতে পারি। আর্থিক ও রাজস্ব নীতির পাশাপাশি কার্যকর বাজার ব্যবস্থাপনাকেও উল্লেখযোগ্য অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমি আশা করি যে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা মূল্যস্ফীতি হার নিয়ন্ত্রণে অতিগুরুত্ব সহকারে এই বিষয়টির আন্তরিকভাবে সমাধান করবেন।

ঢাকা/এনটি/এনএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়