ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পরিবেশ সুরক্ষায় টেকসই সবুজ প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের আহ্বান ওয়ালটনের এমডি গোলাম মুর্শেদের

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ৮ জুন ২০২৩   আপডেট: ২৩:১০, ৮ জুন ২০২৩
পরিবেশ সুরক্ষায় টেকসই সবুজ প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের আহ্বান ওয়ালটনের এমডি গোলাম মুর্শেদের

প্রাইভেট সেক্টর ডায়ালগে বক্তব্য দেন ওয়ালটনের এমডি ও সিইও গোলাম মুর্শেদ

প্লাস্টিকদূষণের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে দেশের পরিবেশবিদরা প্লাস্টিকের বিকল্প টেকসই পরিবেশবান্ধব পণ্য উদ্ভাবনে ব্যাপক গবেষণার পাশাপাশি দেশীয় প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং লাইন স্থাপনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পাশাপাশি দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্লাস্টিক রিসাইক্লিং শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিকে শিল্প খাতের স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। 

বৃহস্পতিবার (৮ জুন, ২০২৩) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটন করপোরেট অফিসের অলিম্পিয়াস হল রুমে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে ‘প্লাস্টিকদূষণে টেকসই সমাধান’ শীর্ষক এক প্রাইভেট সেক্টর ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ালটন গ্রুপের সহযোগিতায় ইউএনডিপি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আরো পড়ুন:

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও গোলাম মুর্শেদ বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য টেকসই ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে ওয়ালটন বদ্ধপরিকর। সেজন্য গঠন করেছি ‘বেটার বাংলাদেশ টুমরো’। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এর আওতায় নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ওয়ালটন জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলা, জলজ প্রাণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ, স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষাসহ এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখছে। ওয়ালটন হেড কোয়ার্টারে স্থাপন করা হয়েছে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট। এছাড়া, ওয়ালটন পণ্যে মেটালের পার্টসের পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে সম্পূর্ণ রিসাইকেলযোগ্য প্লাস্টিক পার্টস। ওয়ালটন পণ্যে ক্রমান্বয়ে প্লাস্টিক পার্টসের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশবান্ধব টেকসই সবুজ উদ্ভাবনী প্রযুক্তির পার্টস ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগের প্রকৌশলীরা।

ইউএনডিপি’র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আরিফ এম ফয়সালের সঞ্চালনায় ‘প্লাস্টিকদূষণ সমাধানে ব্যবসায় কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন পাটবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক বিজ্ঞানী ড. মুবারক আহমেদ খান, ডেনিম এক্সপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোস্তাফিজ উদ্দিন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কামরুল হাসান, এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপের স্টেকহোল্ডার ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজমেন্ট অফিসার ফয়সাল রাব্বী, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ, বিল্ডিং ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের সিইও ফেরদৌসি বেগম, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহরিয়ার হোসেন, ওয়ালটন আরঅ্যান্ডআই‘র (রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন) সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তাপস কুমার মজুমদার, ইকিউএমএস’র কনসালট্যান্ট মৃণাল কান্তি সাহা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ডা. এম খবির উদ্দিন।  

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘প্লাস্টিকদূষণে টেকসই সমাধান’ শীর্ষক প্রাইভেট সেক্টর ডায়ালগে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ

বাংলাদেশে সোনালি ব্যাগের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ড. মুবারক আহমেদ খান বলেছেন, বায়ো-পলিমার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাটের সোনালি ব্যাগ। এতে বায়ো-ডিগ্রেডেবল বা অন্য কোনো ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়নি। অনেকেই বলেন, পলিথিনের তুলনায় পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগের দাম অনেক বেশি। সোনালি ব্যাগের কমার্শিয়াল উৎপাদন শুরু হলে দাম ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে। এই ব্যাগ পুনঃব্যবহারযোগ্য। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও পচনযোগ্য। এসব সুবিধার বিবেচনায় প্লাস্টিকের তুলনায় সোনালি ব্যাগের দাম বেশি না। 

প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে সোনালি ব্যাগের ব্যবহার বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।   

বিল্ডিং ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের সিইও ফেরদৌসি বেগম বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভ্যাট আরোপ করায় দেশে রিসাইক্লিং শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রিসাইক্লিং শিল্প স্থাপনে দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে প্লাস্টিক বর্জ্য কালেকশনের ওপর বিদ্যমান ভ্যাট প্রত্যাহার করা জরুরি। পাশাপাশি রিসাইক্লিংকে শিল্প খাত হিসেবে স্বীকৃত দিতে হবে। এর ফলে দেশীয় উদ্যোক্তারা জিরো বা ১ শতাংশ শুল্ক দিয়ে রিসাইক্লিং শিল্পের প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারবে। এছাড়া, ট্যাক্স হলিডেসহ বিভিন্ন কর ও নীতি সুবিধা পাওয়া যাবে। 

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কামরুল হাসান বলেন, দেশের বৃহৎ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক হিসেবে পরিবেশ সুরক্ষায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দায়বদ্ধতা আছে। তাই, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইক্লিংয়ে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। সেজন্য প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে প্রাণ-আরএফএলে রিসাইক্লিং লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে রিসাইক্লিং লাইনের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।  

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ফেসওয়াশে ব্যবহৃত মাইক্রো বিটস হচ্ছে প্লাস্টিক। এতে ৩০টিরও বেশি ধরনের কেমিক্যালস ব্যবহার করা হয়। মুখে এই মাইক্রো বিটস ব্যবহারের ফলে ত্বকের কোষ মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া, দাঁত পরিষ্কারের অজুহাতে টুথপেস্টে ব্যবহৃত মাইক্রো প্লাস্টিকও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব মাইক্রো প্লাস্টিক দাঁতের পাশাপাশি পাকস্থলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমেরিকা, ইউরোপের মতো উন্নত দেশগুলোতে কসমেটিকসে মাইক্রো বিটস বা প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু, বাংলাদেশে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির টুথপেস্টে এখনো মাইক্রো প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। 

পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানান তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ডা. এম খবির উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক খুব সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার অত্যধিক হারে বাড়ছে। এখনই যদি প্লাস্টিক বিকল্প পণ্য ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া না হয়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ব বাণিজ্যে বড় ধরনের ধাক্কা খাবে। উন্নত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি বন্ধের সম্মুখীন হবে। 

অনুষ্ঠানে ওয়ালটন আরঅ্যান্ডআই’র সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর প্রকৌশলী তাপস কুমার মজুমদার বলেন, ওয়ালটন বাংলাদেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেকসই পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তির পণ্য রপ্তানি করছে। ওয়ালটন পণ্যে মেটালের পাশাপাশি রিসাইক্লিংযোগ্য প্লাস্টিক আইটেম ব্যবহার করা হচ্ছে। ওয়ালটন ফ্রিজের বডি স্ট্যান্ড, এগ শেলফসহ অন্যান্য প্লাস্টিক আইটেমগুলো সম্পূর্ণ রিসাইক্লিংযোগ্য। 

আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন—ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার ও মো. হুমায়ুন কবীর (বেটার বাংলাদেশ টুমরো’র সহ-সভাপতি), সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, আমিন খান, মো. তানভীর রহমান, ফিরোজ আলম, দিদারুল আলম খান (চিফ মার্কেটিং অফিসার), মহসিন সরদার, শাহজালাল হোসেন লিমন, আবদুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।  

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘প্লাস্টিকদূষণে টেকসই সমাধান’ শীর্ষক প্রাইভেট সেক্টর ডায়ালগে অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান।

একরাম/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়