ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

ওয়ালটন প্লাজার ‘কিস্তি ক্রেতা সুরক্ষায়’ চাকরি পেলেন ৪ জন

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ২২ জুন ২০২৩   আপডেট: ১৯:০৫, ২২ জুন ২০২৩
ওয়ালটন প্লাজার ‘কিস্তি ক্রেতা সুরক্ষায়’ চাকরি পেলেন ৪ জন

ওয়ালটন পণ্য কেনা ক্রেতার পরিবারের চার সদস্য প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরি পেয়েছেন

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করতে দেশে অনেক কোম্পানি তাদের পণ্য কিস্তিতে ক্রেতার হাতে তুলে দেন। ক্রেতাও পণ্যের মূল দামের একটা অংশ জমা দিয়ে পণ্যটি বুঝে নেন। এরপর প্রতি মাসে কিস্তির মাধ্যমে পণ্যের টাকা পরিশোধ করার সুযোগ পান। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষই লাভবান হন।

এসব প্রচলিত ধারার বাইরেও ক্রেতাদের বিশেষ কিছু সুবিধা দেওয়ার একটি স্কিম হাতে নিয়েছে দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়েন্ট কোম্পানি ওয়ালটন। প্রতিষ্ঠানটির টিভি, ফ্রিজ, মোবাইলসহ উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য ক্রেতাদের জন্য সহজলভ্য করেছে কিস্তির মাধ্যমে। কেবল তা-ই নয়, কোনও ক্রেতা ওয়ালটন থেকে নেওয়া যে কোনও পণ্যের কিস্তি পরিশোধ করার আগে যদি কোনও দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় মারা যান; তাহলে সেই ক্রেতা পরিবারের কাউকে আর ওই পণ্যের কিস্তি পরিশোধ করতে হয় না। উপরন্তু সেই পরিবার পাবেন ৫০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ আর্থিক সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটি এই সুবিধার নাম দিয়েছে ‘কিস্তি ক্রেতা সুরক্ষা’। এটি ওয়ালটন প্লাজার এক‌টি উদ্যোগ।

এ ছাড়া, কোনও ক্রেতা ওয়ালটন পণ্য কিনে কিস্তি পরিশোধের আগে মৃত্যুবরণ করলে কেবল আর্থিক সুবিধাই নয়, তার পরিবারের যে কোনও একজন পাবেন (যোগ্যতা অনুযায়ী) প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরির সুযোগ। সম্প্রতি তেমনই চারজন ওয়ালটন পণ্য কেনা ক্রেতার পরিবারের চার সদস্য পেলেন প্রতিষ্ঠানটিতে কাজের সুযোগ। 

এদের একজন রাশেদুল ইসলাম রনি। যার বাবা মোসলেম উদ্দিন ওয়ালটন থেকে টিভি কেনার পর মাত্র দুটি কিস্তি পরিশোধের পর মারা যান। রনির বাবা ছিলেন ক্যান্সার আক্রান্ত। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি ওয়ালটন থেকে পেয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সুবিধা। এ ছাড়া, দশম শ্রেণি পড়ুয়া রনিকে ওয়ালটনে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সে তার বাড়ি টাঙ্গাইলের আশপাশে কোনও ওয়ালটন প্লাজায় কাজ করার সুবিধা পাবে। 

আরেক ক্রেতা মৌলভীবাজারের দুদু মিয়া। তার ১৮ বছরের ছেলে রুবেল মিয়া বলেন, ‘বাবা ওয়ালটন থেকে একটি ফ্রিজ কিনেছিল। সেই ফ্রিজের দুই কিস্তিও জমা দিয়েছেন। এরপর হঠাৎ করে রোজার ঈদের দিন বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। বাবার মৃত্যুর ঘটনা জানার পর ওয়ালটন থেকে ফ্রিজ কেনার কিস্তি মওকুফের পাশাপাশি ‘‘কিস্তি ক্রেতা সুরক্ষার’’ আওতায় নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ২১ জুন আমাকে ওয়ালটনে চাকরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়।’

আরও দুজন পণ্যের কিস্তি মওকুফ এবং আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি পেয়েছেন ওয়ালটনে কাজের সুযোগ। এদের একজন কিশোরগঞ্জের সাজিয়া আক্তার। তার বাবা সুলতান মিয়া হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান মাস ছয়েক আগে। তিনি ওয়ালটন থেকে একটি মোবাইল সেট কিস্তিতে কিনেছিলেন। সেই ফোনের কিস্তি পরিশোধের আগে সুলতান মিয়া মারা গেলে তার পরিবার ওয়ালটনের পক্ষ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং সাজিয়া পেয়েছেন চাকরি সুযোগ।

আরেকজন সাতক্ষীরার সোবহান গাজী। তার ২২ বছরের ছেলে সাঈদ হোসেন বলেন, ‘বাবা ওয়ালটন থেকে একটি টেলিভিশন কিস্তিতে কিনেন। ছোটখাটো ব্যবসা করতেন বাবা। ৩-৪ কিস্তি দেওয়ার পর হঠাৎ বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। এই খবর ওয়ালটন কোম্পানিতে জানানোর পর বাবার সব কিস্তি মওকুফ করা হয়। এ ছাড়াও, আমাদের পরিবারকে নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এরপর আমাকে ডেকে ওয়ালটনে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।’

রনি, রুবেল, সাজিয়া এবং সাঈদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি কিস্তি মওকুফ করে আমাদের আরও টাকা দেবে। তার ওপর আমাদের ডেকে ওয়ালটনের মতো একটি বড় কোম্পানিতে চাকরি দিয়েছে। আমরা খুব খুশি। এই কোম্পানির প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আমাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করে যাব।’

‘কিস্তি ক্রেতা সুরক্ষা’ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়ালটনের সিনিয়র ডেপুটি ডাইরেক্টর ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পণ্য যারা কিনেন তারাও ওয়ালটন পরিবারের একজন সদস্য হয়ে যান। সেই সদস্যের বিপদে পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা তাদের কিস্তির বাকি টাকা মওকুফের পাশাপাশি কিছু অর্থ দিয়ে সেই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। সেই টাকার পরিমাণ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত। তাছাড়া, আমাদের কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেই পরিবারের কোনও সদস্যকে আমরা চাকরির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ওয়ালটন যতদিন থাকবে, এই ধারাও ততদিন অব্যাহত থাকবে।’

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়