বশেমুরবিপ্রবিতে পুঁজিবাজার নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিস এর ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মশালা হয়েছে।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) গোপালগঞ্জে পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক ধারাবাহিক কর্মশালার অংশ হিসেবে কর্মশালা হয়৷
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগীতায় কর্মশালাটি আয়োজন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেনিং একাডেমি৷ প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ.কিউ.এম মাহবুব৷ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম এবং ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু৷
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স এবং ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান তন্ময় বর্মন, ফ্যাকালটি অব বিজনেজ স্ট্যাডিজ এর ডিন ড. ইশিতা রায় এবং ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, সিপিএ ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম৷
অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন ফ্যাক্যালটি অব বিজনেজ স্ট্যাডিজ-এর ডিন ড. ইশিতা রায় এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান৷
স্বাগত বক্তব্যে ড. ইশিতা রায় এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আজকের এ আয়োজন পুঁজিবাজার সম্পর্কে প্রাকটিক্যালভাবে জানার একটি বড় সুযোগ। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এবং ছাত্র-ছাত্রীরা ডিএসইর এই অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে পুঁজিবাজার সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের মাধ্যমে টেকনিক্যাল বিষয়ে জানতে পারবে। এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে জানার অনেক বড় একটি সুযোগ। আজকের এই প্রোগামে যা জানা যাবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য যেমন কাজে আসবে, তেমনি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যও কাজে আসবে বলে আমি মনে করি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আমরা খুশি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমরা কথা বলতে পারছি। বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিএসই’র বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা বিএসইসি, ডিএসই এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আইওএসকোর কার্যক্রমের একটি অংশ। এতে করে আর্থিক বিনিয়োগের পরিবেশ ও সময় ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়৷ তাই আইওএসকোর সদস্য হিসেবে আমরা সারাদেশে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশব্যাপী বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যাতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ঝুঁকি এড়িয়ে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করে। জনগণের দোড়গোড়ায় ডিএসই’র সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধশালী এবং টেকসই পুঁজিবাজার বিনির্মাণে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই৷
বিশেষ অতিথি বিএসইসির কমিশনার মো. আব্দুল হালিম বলেন, আজকের যে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি অনুষ্ঠান, তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নয়। এটা সবার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। আজকে এখানে যারা ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন তারা হয়ত এখনো কোনো উপার্জনে নেই। কিন্তু আমরা আজকে আপনাদের ভবিষ্যতের বিনিয়োগ নিয়ে কিছু কথা বলব। একজন মানুষ যা আয় করে, তা থেকে সব খরচের পরে যে বাড়তি অর্থ থাকে সেটাই বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগের ফলে জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি তাতে আমরা কত শতাংশ সেভিংস করতে পারি তাতে অবদান রাখে। আগে আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সেটা ছিল ১৩-১৪ শতাংশ। আর আজকে সেটা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত আয়ে উন্নীত হতে যে মাথাপিছু আয় লাগবে সেখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে। আজ অনেকে বিদেশ থেকে টাকা পাঠান কিন্তু কোনো বিনিয়োগ করতে পারেন না। আবার অনেক সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ না করার কারণে আর্থিকভাবে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হন। এর কারণ হচ্ছে তারা বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। আমাদের দেশে একজন মানুষ বিনিয়োগ করে কত আয় আর লোকসান করল সেটা সে বুঝতে পারে না। দেখা যায় তার আয়ের থেকে লোকসান বেশি হয়। এর কারণ হচ্ছে তার বিনিয়োগের সঠিক জ্ঞান নেই। তাই আমরা শুধু এখানে না, সারা দেশের সব যায়গায় এই প্রোগ্রাম আয়োজন করি। আজকে ডিএসইর মাধ্যমে এখানে এসেছি আপনাদের জানাতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখনি বলছি না আপনারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। তবে পুঁজিবাজার বিনিয়োগের একটি অন্যতম ভালো মাধ্যম। যখন আপনারা আয় করবেন এবং আপনাদের বিনিয়োগের জন্য অর্থ থাকবে তখন এখানে যেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে পারেন। আমরা একটি বয়সের পর আর আয় করতে পারব না, তখন তাহলে কি করবেন। তাই ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজার একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের যায়গা। পুঁজিবাজারকে অনেকেই কাঁচাবাজার মনে করেন। যারা এখানে প্রতিদিন কেনা-বেচা করতে চান। কিন্তু এটা সেই যায়গা না। এখানে আপনার দৈনন্দিন ব্যয় বাদ দিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। তাই পুঁজিবাজারে যদি দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা যায় তবে এখান থেকে রিটার্ন সম্ভব।
অর্থনৈতিক সব সূচকে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে হবে। বুঝে শুনে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। যারা অন্যের কথায় উত্সাহিত হয়ে বাজারে বিনিয়োগ করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবাইকে সাথে নিয়ে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তবেই স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি ডিএসইর চেয়ারম্যান অধাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বিজয়ের এই মহান মাসে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহিদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যদের স্বরণ করে বলেন, একটি গতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য দরকার উন্নত তথ্য প্রযুক্তি, মানসম্পন্ন পণ্য, সুশাসন, দক্ষ জনশক্তি এবং শিক্ষিত ও সচেতন বিনিয়োগকারী৷ ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের মাধ্যমেই উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ইক্যুইটির পাশাপাশি নতুন পণ্যভিওিক বৈচিএময় বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে৷ একই সাথে আমাদের বিনিয়োগকারীদেরও বিনিয়োগ জ্ঞ্যান বাড়াতে হবে এবং সচেতন হতে হবে৷
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভাইস-চ্যান্সেলর অ ধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বিজয়ের এই মাসে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে এই লিটারেসি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস রুমের বাইরেও অনেক কিছু শিখতে পারবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অনেক মজবুত। একটি দেশের পুঁজিবাজার যতটা উন্নত, সে দেশের অর্থনীতি ততটা ভালো। একটি ভালো পুঁজিবাজার ছাড়া ২০৪১ সালের উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সেজন্য ডিএসইর আজকের এ আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
/এনটি/এসবি/