ঢাকা     রোববার   ১৮ মে ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩২

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ এখন নির্ভরশীল নয়: অর্থ উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৯ এপ্রিল ২০২৫   আপডেট: ২২:৫৭, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ এখন নির্ভরশীল নয়: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সব শর্ত মেনে বাংলাদেশ আর কোনো ঋণ নিতে চায় না। এছাড়া বাংলাদেশ এখন আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়।”

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বাজেটে সাপোর্টের অর্থ ৫ বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হয়। বাজেট সাপোর্টের প্রকল্প তো ২০ বছরের জন্য হয় না। আমরা সতর্ক আছি। আইএমএফ টাকা দিলেই আমরা নেব না। আমরা তো ঋণের বোঝা নিতে চাই না। আমি যদি ঋণ নিতে থাকি, টাকার বিনিময় হার কমে গেলে আমার যেখানে ৩ বিলিয়ন ডলার শোধ করার কথা, পরে ওটা ৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। তখন আমার ১৬০-১৮০ টাকা করে ডলার কিনতে হবে। আমরা এসব বিষয় চিন্তা-ভাবনা করছি।”

আরো পড়ুন:

নয় মাস ধরে আইএমএফর টাকা পাওয়া যাচ্ছে না-সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমরা একটা শক্ত পদক্ষেপ নেব।”

পদক্ষেপ আমরা নেব, নাকি তারা নেবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “না না, এটা আমরা নেব। ওদের চাকরি-বাকরি আছে তো। ইন্দোনেশিয়ায় টাকা দিতে না পেরে অনেকের চাকরি চলে গেছে। মালয়েশিয়াতে মাহাথির মোহাম্মদ শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা যদি না নেই, দেখবেন ওখানে কয়জনের চাকরি যায়।”

তিনি বলেন, “সার্বিকভাবে এখন আমরা আর আইএমএফ নির্ভরশীল না। ওই দিন চলে গেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ওরা বলেছে কন্টিনিউ করবে।”

অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আইএমএফের দুই একটা ইস্যু আছে যেটা মেজর না। কিছু শর্ত আছে যেগুলোর সবগুলো আমরা পরিপালন করতে চাই না। আমরা সেসব বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আরগুমেন্ট করেছি। তারা বলেছে এ কর সেই কর, আমরা সে পথে হাঁটব না। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক ভালো। ডিসেম্বর থেকে এখন অনেক ভালো। দ্রুত রিফর্ম করেছে যেটা ভালো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আইএমএফ থেকে টাকা পয়সা না নিয়েই ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট ও রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। এই সরকার আসার পর কিন্তু আমরা আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পাইনি। তাদের বলেছি তোমাদের টাকা ছাড়াই আমরা সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীল আনতে পেরেছি। এজন্য এখন তারা যে শর্ত চাপিয়ে দেবে সেটা বুঝতে পেরেছে। তারা বলেছে আমরা কন্টিনিউ করছি।”

তিনি আরো বলেন, “এছাড়া প্রজেক্ট সাপোর্ট অনেকগুলো আছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি পাইপলাইনে আছে। এআইবি থেকে ১ মিলিয়ন ডলার চেয়েছি। এনডিবি ও ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সহায়তা চেয়েছি। ফলে প্রজেক্ট সাপোর্টের ব্যাপারে তেমন কোনো সমস্যা দেখছি না। তবে বাজেট সাপোর্টের বিষয়ে একটু আলোচনা চলছে। আইএমএফ এর অনেক শর্ত থাকে। তাই আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি নিজেদের মতো করে বাজেট দিতে চেষ্টা করব।”

আইএমএফের কি শর্ত আছে এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “তাদের শর্তের মধ্যে আমরা বলেছি এনবিআর সেপারেশন করব। ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটটাকে বলেছে সহজ করতে। আমরা বলেছি একেবারে ওপেন করব না।আমাদের স্টেবিলাইজেশন ফান্ডে ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার জন্য বলেছি। ওরা বলেছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে। তবুও আমরা বলেছি চিন্তা-ভাবনা করে আমরা সিদ্ধান্ত দেব। সব মিলিয়ে কিন্তু দুঃখ করার কোনো কারণ নেই।”

আর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সার্বিকভাবে আমি বলব অনেকের ধারণা যে আমরা শুধু অর্থ আনতে গেছি। আসলে সেটা কিন্তু না। আমরা ডেফিনিটলি আইএমএফ এর সঙ্গে যে নেগোসিয়েশনটা চলছিল দুইটা টার্মস নিয়ে সেটা কন্টিনিউ করার জন্য। এছাড়া বিশ্বব্যাংক আছে তাদের সঙ্গেও কথা বলার জন্য গিয়েছি। আমি মনে করি আমাদের এবারের সফর সফল হয়েছে।”

“কারণ আমি তো বিশ্বব্যাংক, এআইবি, আইওএম, আইএমএফ, আইএফসি, ওপেক ফান্ডসহ ইউএসএর বড় একটা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল, এছাড়া ইউএস সরকারের এনার্জি বিভাগ, স্টেট বিভাগ, লেবার, কৃষি খাত এবং ট্রেজারি বিভাগের সাথে কথা বলেছি। সবাই কিন্তু আমাদের সাথে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে ও কথা বলেছেন।”

তিনি বলেন, “এ বছর বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পিছনে না ঘুরে বরং তারা ইউএস প্রেসিডেন্ট ও অফিসের লোকজনের কাছে যাচ্ছে। তারা সবাই বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের থেকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।”

অর্থের সংস্থানের জন্য তিনটা চুক্তিতে স্বাক্ষর হয়েছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ওপেক ফান্ডের সাথে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। তারা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে। আর আইএফসির সাথে কথা হয়েছে তারাও ৫০০ মিলিয়ন ডলার বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে।”

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়