বাজেট পেশ সোমবার, লক্ষ্য অর্থনীতির ব্যয় সংকোচন
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা এবং রাজস্ব ঘাটতি হ্রাস এই তিন প্রধান লক্ষ্যকে সামনে রেখে আসছে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট।
সূত্র বলছে, আগামী অর্থবছরে মোট বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো সরকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কম আকারের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বর্তমানে ‘ব্যয় সংকোচন নীতি’র দিকে যাচ্ছে। চলতি বছর দেশে মূল্যস্ফীতি একাধিকবার ৯ শতাংশের ঘরে পৌঁছেছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও বৈদেশিক সহায়তা হ্রাসের ফলে অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে খরচ কমিয়ে আনাই হচ্ছে মূল কৌশল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, “এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং মুদ্রার স্থিতিশীলতা রক্ষা। সরকার বাজেট ঘাটতি হ্রাস করে ঘরোয়া বিনিয়োগ এবং জনগণের ভোগব্যয় স্বাভাবিক রাখতে চায়, এটাই সঠিক কৌশল।”
সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হলেও, অবকাঠামো প্রকল্প, সরকার পরিচালন ব্যয় এবং অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকিতে কাটছাঁট করা হবে। উন্নয়ন বাজেট, অর্থাৎ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার আশেপাশে রাখা হতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা কম।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রাজস্ব আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করছে, তাও বাস্তবভিত্তিক রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়নের চেষ্টা চলছে।”
২০২৫–২৬ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। তবে এনবিআরের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “রাজস্ব ঘাটতি পূরণে কর আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ ও সম্পদ পুনর্বিন্যাসের ওপর জোর দিতে হবে। তা না হলে ছোট বাজেট দিয়েও কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক সুফল আসবে না।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকলে বাজেট যতই ছোট হোক, তা জনগণের কল্যাণে ব্যবহার হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকেই এই শৃঙ্খলা দেখাতে হবে।”
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর কাছ থেকে ধারাবাহিক ঋণ পেতে হলে অর্থনৈতিক সংস্কারে বাস্তব অগ্রগতি প্রয়োজন। বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকি সংস্কার ও রাজস্ব আদায়ের কৌশলে ইতিবাচক অঙ্গীকার রাখতে হবে। আইএমএফ-এর সর্বশেষ পর্যালোচনায় বাংলাদেশকে রিজার্ভ ও ব্যাংকিং খাত সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকা/এএএম/এসবি