ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

পুঁজিবাজারে আসছে দুটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ২৬ আগস্ট ২০২৫  
পুঁজিবাজারে আসছে দুটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পিএলসি। ইতোমধ্যে ২০টি কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।

ডিএসই আশা করছে, এ বছরের শেষ নাগাদ নতুন দুইটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। আর আগামী এক বছরের মধ্যে ১০টি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি তালিকাভুক্তির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চলছে। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে পুঁজিবাজারের গভীরতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে বলে মনে করে ডিএসই।

আরো পড়ুন:

ডিএসই কর্তৃপক্ষ রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছে।

তথ্যমতে, চলতি বছরের মে মাসে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনাগুলোর প্রথম শর্তই হলো- সরকারি শেয়ার আছে এমন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও পুরোপুরি সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা। এই নির্দেশনা পালনের লক্ষ্যে ডিএসই ইতোমধ্যে প্রায় ২০টি কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করেছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের শেষ নাগাদ নতুন দুইটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে বলে মনে করছে ডিএসই। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনের পরে এবং এক বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে ১০টি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি তালিকাভুক্তি হবে বলে মনে করে ডিএসই।

দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করতে নিয়ন্ত্রক বিএসইসি নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে ডিএসই। মূলত সরকারি কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে দফা দফায় চেষ্টা করেও তাদের পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হয়নি। অবশেষে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি গতিশীল করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে চলতি বছরের ১১ মে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় লাভজনক বেশ কিছু কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন বা সরকারি শেয়ার রয়েছে কোম্পানিগুলো হলো- ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), সাইনোভিয়া (সাবেক স্যানোফি) বাংলাদেশ লিমিটেড, নোভার্টিস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সিনজেন্টা (বাংলাদেশ) লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ পিএলসি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস্ কোম্পানি লিমিটেড, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ও জীবন বীমা কর্পোরেশন লিমিটেড ইত্যাদি।

এছাড়া ওষুধ প্রস্তুতকারক একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগসকে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। সেই সাথে কোম্পানিটি ও মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে বৈঠকও করেছে তারা। এর আগে গত ২৪ জুলাই লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিএসইর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে আস্থা ফেরাতে, ভালো নীতি গ্রহণ এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন জরুরী। এতে বাজারে সুশাসন নিশ্চিত হলে অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ নিয়ে তালিকাভুক্ত হবে। এবং বাজারের গভীরতা বাড়বে। কারণ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শুধু অর্থ সংগ্রহের জন্য নয়। এতে কোম্পানির সুনাম ও স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পায়। এটা তাদের বুঝাতে হবে। যখন বাজার ভালো থাকবে। অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ভালো করবে তখন যারা তালিকাভুক্ত না তাদের আগ্রহ দেখা যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আশুগঞ্জ পাওয়ার বর্তমানে বাজারে বন্ডের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত রয়েছে। তবে কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে তালিকাভুক্তির কথা ভাবা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আগ্রহ দেখিয়েছে। যদি নভেম্বর মাসে তারা আবেদন করে তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারির আগেই তাদের বাজারে লেনদেন করতে দেখা যাবে। এছাড়া এসেনসিয়াল ড্রাগসকে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে কোম্পানিটিরে সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তারাও এ বিষয়ে আগ্রহী। আশা করছি পরিচালনা পর্ষদের সম্মতি নিয়ে কোম্পানিটি এ বছরের মধ্যেই পুঁজিবাজারে আসবে।”

চেয়ারম্যান আরো জানান, “যাদের সাথে এ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে দুই-তিনটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ নিয়ে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে।  কিন্তু বিগত সময়ের অভিজ্ঞতার কারণে পুঁজিবাজারে আসতে একধরনের অনিহা দেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে সুশাসন ঘাটতি, নানা ধরনের হয়রানি ও কমপ্লায়েন্স পালন সহ যে সমস্যার‌ কথা তারা জানিয়েছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

চলমান উদ্যোগ এগিয়ে নিতে পারলে আগামী এক বছরে ১০টি বড় কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার আশা প্রকাশ করেন ডিএসই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আগামী নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারকে চলমান রাখতে হবে। এবং সংস্কার করা হচ্ছে সেগুলো ধরে রাখতে না পারলে কোনো লাভ হবে না। আমরা দেখেছি বিগত সময়ে বাজারকে নানাভাবে কারসাজি ও অনিয়মের মাধ্যমে অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। এখন সংস্কারের মাধ্যমে বাজারকে গতিশীল করার কাজ চলছে। তাই যে সরকারই আসুক না কেন তাদের উচিত হবে মানুষের আস্থা ধরে রাখতে পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতে সংস্কার ভালোভাবে শেষ করা। আর এতে আগামী এক বছরে ১০টি বড় কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হবে।”

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে মাত্র ২০টি সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলোর বাজার মূলধন ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলো হলো- এটলাস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি সার্ভিস), বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ইস্টার্ন কেবলস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইবিসি), যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল টিউবস, পদ্মা অয়েল, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, রূপালী ব্যাংক, শ্যামপুর সুগার মিলস, তিতাস গ্যাস, উসমানিয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি, লিন্ডে বাংলাদেশ  ও জিলবাংলা সুগার মিলস।

ঢাকা/এনটি/রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়