ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সংলাপেই সীমাবদ্ধ রাকসু নির্বাচন!

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সংলাপেই সীমাবদ্ধ রাকসু নির্বাচন!

নতুন আরেকটি বছর আসলেও রাকসু নির্বাচনের তেমন অগ্রগতি নেই। কার্যক্রম শুধু সংলাপেই সীমাবদ্ধ।

প্রশাসনের দাবি, নির্বাচন দেওয়ার মতো ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তবে ছাত্র সংগঠনগুলো বলছে, ক্যাম্পাসে নির্বাচনী পরিবেশ রয়েছে এবং এখনই নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তোরজোর শুরু হওয়ার পর রাকসু নিয়েও আশার সঞ্চার হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে।

আর ডাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত বছরের শেষের দিকেই নির্বাচন হওয়ার আশ্বাসে তাদের এই আশা আরো জোরালো হয়।

ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রশাসন রাকসু সংলাপের মাধ্যমে মূলত কালক্ষেপণ করছে। যে প্রক্রিয়ায় প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তাতে আদৌ নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হতো কি না তারা সন্দিহান।

রাকসু সংলাপ কমিটি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ফেডারেনের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রাকসু সংলাপ। দীর্ঘ ৬ মাস ছাত্র রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী-সামাজিক সংগঠনগুলোর সাথে সংলাপ শেষে ৪ জুলাই আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষদের সাথে আলোচনা করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবি সংলাপ কমিটির কাছে তুলে ধরেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন নিয়ে কিছুদিন আগেও আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে তারা জানিয়েছেন। ক্যাম্পাসে এখন নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। এখনই নির্বাচন দেওয়ার উপযুক্ত সময়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন দ্রুত কার্যক্রম করছে না তা জানি না। তবে আমরা আবারও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবি জানাবো।’

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘রাকসু কার্যকর না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকারের কথা বলতে পারে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংলাপ আয়োজনের পর ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক সহবস্থান নিশ্চিতের পাশাপাশি দ্রুত তফসিল ঘোষণার আশ্বাস দেন। প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন সাময়িক স্থগিত রাখি। পরে আমরা নির্বাচনের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্যাম্পাসে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ’ রয়েছে জানিয়ে নানা তালবাহানা শুরু করে। সত্যিকার অর্থে প্রশাসন রাকসু চায় না। কারণ এখন তারা যেভাবে সকল সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারছে, রাকসু সচল থাকলে তা আর পারবে না। তাই মূলত রাকসু হচ্ছে না। নির্বাচনের দাবিতে আমরা আবারও আন্দোলন শুরু করবো।’

রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, ‘রাকসু সংলাপ কমিটি গঠনের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। বিভিন্ন সময় কমিটির কাছে জানতে চাইলেও তারা সংলাপের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ সম্পর্কে যর্থার্থ কোন যুক্তি দেখাতে পারেনি। দ্রুত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাণচঞ্চল ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মান করার দাবি জানাচ্ছি।’

রাকসু সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবি রাকসু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক সংলাপ কমিটি গঠন করে। সবাই রাকসু নির্বাচন চায়। আমরা হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গেও কথা বলেছি। অধিকাংশ প্রাধ্যক্ষই আবাসিক হলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলে মত দিয়েছেন। তাছাড়া ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান নেই। আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা ছিলো রাকসুর সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু সমাবর্তন, ভর্তি পরীক্ষার কারণে আমাদের কার্যক্রম সম্পন্ন কিছুটা দেরী হয়েছে। এখন ফের নতুন করে হলগুলোতে সংলাপ শুরু করবো।’

‘নির্বাচন দেওয়ার মতো ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই’ প্রশাসনের এমন দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জানান, বিগত বছরগুলোতে ক্যাম্পাসে মৌলবাদী ছাত্র শিবিরের যেরকম প্রভাব ও অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিলো, তা এখন নেই। এখন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে। আর প্রশাসন যদি মনে করেন যে ক্যাম্পাসে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই তাহলে এটি ঠিক নয়।

 

সাইফুর/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়