ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাঠদানে ব্যাপক প্রস্তুতি, চলছে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৮:০০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রায় দেড় বছর পর অবশেষে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।  আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হবে সব মেডিক্যাল কলেজ।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ৫ সেপ্টেম্বর আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।  এসএসসি, এইচএসসি ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থিদের ক্লাস হবে প্রতিদিন।  অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস হবে। 

কতটা প্রস্তুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানরা স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তে খুশি। পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সবকিছু পরিস্কার করে রেখেছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান পরিস্কারে ঘাটতি থাকলেও তারা সেগুলো শেষ করতে পুরোদমে কাজ চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা যাতে শ্রেণিকক্ষে এসে তার চিরচেনা রূপ ফিরে পায় সে ব্যাপারে যথেষ্ট সোচ্চার রয়েছেন শিক্ষকরাও।

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্ট জোসেফ হাইস্কুল ও কলেজের প্রিন্সিপাল ব্রাদার লিও পেরেকা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের রেগুলার পরিস্কার কার্যক্রম চলমান ছিল।  যে কারণে আমাদের পরিষ্কার পরিছন্নতা নিয়ে নতুন করে প্রস্তুতির জন্য আলাদা চিন্তা করতে হচ্ছে না। আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

তিনি বলেন, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ছিল।  শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের নিয়মিত কাজ চালিয়ে গেছেন। শিক্ষার্থীরাও তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  শুধু আমাদের পার্থক্য ছিল স্কুল ও বাসা।  পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় আমাদের নতুন করে ব্যাগ পেতে হচ্ছে না।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মোল্লা বলেন, আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। অল্প সময় পেলেও শিক্ষরাও ছাত্রদের গাইড করবে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার জন্য ছাত্রদের গাইড দেওয়ার সব প্রস্তুতিও রয়েছে স্কুলের। স্কুল ও কলেজভবন, ক্লাসরুম  নিয়মিত পরিস্কার করা হয়।  প্রতি শুক্র ও শনিবারে স্কুল ও কলেজ ভবনে বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কারণে পরিস্কার রাখতে হয়।  অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, যেহেতু সময় কম। তাই স্কুলের পাশাপাশি অবশ্যই বাসায় ছাত্রদের পড়াশোনার প্রতি নজর রাখবেন। আর অবশ্যই ছাত্রদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ স্কুলে পাঠাবেন।

ওয়াইডব্লিউসিএ জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল র‍্যাচেল প্রভা বলেন, আমাদের নিয়মিত শ্রেণিকক্ষ ওয়াশরুম, মাঠ পরিস্কার কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। সবকিছু নিট অ্যান্ড ক্লিন আছে। শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট সবকিছু নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে।  এবং রেগুলার আমাদের কার্যক্রম চলমান।  সরকার যদি বলে আমাদের শুধু ১২ সেপ্টেম্বরই নয়, আগামীকাল থেকে স্কুল খুলবে, তাও আমরা প্রস্তুত আছি।

মোহাম্মদপুর পি্রেপটারী স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর বয়েস শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল খালেদ মোশারফ বলেন, ১২ তারিখ থেকে স্কুল চালু করতে আমরা প্রস্তুত আছি। লকডাউন ছাড়া অন্যসব সময় আমরা বিদ্যালয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রেখেছি। এখনো রাখা আছে।

শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, যেসব শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের বাসায় করোনা রোগী আছেন তাদের এই সময় স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে।  প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১২ বছর বয়সের বেশি শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। 

স্কুল-কলেজ খোলার গাইডলাইন
স্কুল-কলেজ খোলার গাইডলাইন প্রকাশ করেছে মাউশি।  রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে সব স্কুল-কলেজকে নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি।

নির্দেশনাগুলো হলো- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ মুখসহ অন্যান্য স্থানে কোভিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে সব শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সবগুলো প্রবেশমুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা। যদি কেবল একটি প্রবেশমুখ থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশমুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে। 

প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথমদিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।  প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথমদিন শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সে বিষয়ে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের দেয়া ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে।  প্রতিষ্ঠানের সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবক প্রবেশের সময় সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর সঠিকভাবে মাস্ক (সম্ভব হলে কাপড়ের মাস্ক) পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার এমন ব্যবস্থা করা যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢোকার আগে সবাই সাবান দিয়ে হাত ধুতে পারে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।  এক্ষেত্রে পারস্পারিক তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরুপণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে। 

প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত মেরামত, বৈদ্যুতিক মেরামত এবং পানির সংযোগজনিত মেরামত সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ইয়ামিন/মেসবাহ/এসবি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ