মুখোমুখি ফ্রোজেন টু-ফোর্ড ভার্সাস ফেরারি
২০১৩ সালের সাড়া জাগানো অ্যানিমেশন সিনেমা ‘ফ্রোজেন’। মুক্তির পর দর্শক-সমালোচকের মন জয়ের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী আয় করে ১.২ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া দু’টি ক্যাটাগরিতে অস্কারও জয় করে এটি। স্বাভাবিকভাবেই এ সিনেমার সিক্যুয়েলের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন দর্শকরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২২ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাচ্ছে ‘ফ্রোজেন টু’। একই দিনে বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সেও মুক্তি পাবে এটি।
অন্যদিকে গাড়ির জগতে বিখ্যাত দুই নাম ফোর্ড ও ফেরারি। প্রতিষ্ঠাতাদের নামেই ব্র্যান্ড দু’টি। পরস্পরের মধ্যে প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। কার রেসিং প্রতিযোগিতায় কে কাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে সেই চেষ্টায় মত্ত থাকতেন। তাদের সেই প্রতিযোগিতার গল্প এবার দেখা যাবে চলচ্চিত্রে। সিনেমার নাম ‘ফোর্ড ভার্সাস ফেরারি’। জেমস ম্যানগোল্ড পরিচালিত এ সিনেমা ২২ নভেম্বর স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাবে।
ফ্রোজেন টু
ওয়াল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন স্টুডিওস প্রযোজিত সিনেমাটি হ্যান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথা ‘দ্য স্নো কুইন’ অবলম্বনে নির্মিত। আগের সিনেমার মতো এটিও যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন ক্রিস বাক ও জেনিফার লি। বিভিন্ন চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন ক্রিস্টেন বেল, ইডিনা মেনজেল, জনাথন গ্রথ ও জোশ গ্যাড। ইংরেজির পাশাপাশি সিনেমাটি হিন্দিতেও মুক্তি পাবে ভারতে। আর হিন্দি ডাবিংয়ে এলসা ও অ্যানা চরিত্রে কণ্ঠ দিচ্ছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও পরিণীতি চোপড়া। এই প্রথম কোনো সিনেমায় একসঙ্গে দুই বোন কাজ করলেন। সিনেমাটির একগুঁয়ে চরিত্র এলসাকে গভীরভাবে অনুভব করেন প্রিয়াঙ্কা। চরিত্রটিতে কণ্ঠ দেওয়া তার জন্য একটি দারুণ সুযোগ বলে মনে করেন তিনি। পরিণীতি জানান, ‘ফ্রোজেন’ তার প্রিয় অ্যানিমেশন সিনেমা। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে সিনেমাটিতে কণ্ঠ দেওয়ার সুযোগ তার কাছে অনেকটা কেকের ওপরে থাকা চেরির মতো।
‘ফ্রোজেন’ সিনেমায় দেখা যায়, এলসা আর অ্যানা নামে দুই রাজকুমারী। ছোটবেলায় যারা ছিল মানিকজোড়। বড় বোন এলসার জাদুকরি ক্ষমতা আছে। নিজের আঙুল দিয়ে সে মুহূর্তেই বানিয়ে ফেলতে পারে তুষার কিংবা বরফ। রাজপ্রাসাদের ভেতর এটি ছিল তাদের মজার খেলা। কিন্তু এই খেলাই ডেকে আনে বিপদ। এলসার জাদুকরি ক্ষমতার আঘাতে অ্যানা প্রায় মরতেই বসে। বনের ডাইনিদের পরামর্শে আলাদা করা হয় দুই বোনকে। ঘুম থেকে উঠে অ্যানা দেখে, সে এখন অন্য এক জগতে বাস করে, যেখান থেকে অ্যানার সঙ্গে মেলা-মেশার আর কোনো সুযোগ নেই। বেশ কয়েক বছর পর দুই বোনই যখন বড় হয়, তখন এলসার খোঁজে বাড়ি থেকে বের হয় অ্যানা। বোনকে তার ভীষণ দরকার। কারণ তাদের রাজ্য স্থায়ী এক শীতবুড়োর প্রকোপে আক্রান্ত। এই সুযোগে অ্যানার হবু স্বামী প্রিন্স হ্যান্স ষড়যন্ত্র করে রাজসিংহাসন দখল করার। ভয়াবহ বিপদ। এজন্য এলসাকে ভীষণ দরকার। কিন্তু তাকে খুঁজে পেতে হলে পাড়ি দিতে হবে বিপদসংকুল পথ। আর সেই অভিযানে অ্যানার সঙ্গী হয় ক্রিস্টফ, আর তার পোষা হরিণ সভেন। দুই বোনের ভালোবাসা, হৃদয়ের উষ্ণতার গল্প ‘ফ্রোজেন’। এবারের সিনেমার গল্পও সেই ধারাবাহিকতায় এগিয়েছে।
ফোর্ড ভার্সাস ফেরারি
সিনেমার গল্পে জোর দেওয়া হয়েছে ফোর্ড অটোমোটিভ ডিজাইনার ও রেসিং ড্রাইভার ক্যারল শেলবি এবং ব্রিটিশ ড্রাইভার কেন মাইলসের চরিত্র দুটির ওপর। ক্যারল শেলবির ভূমিকায় দেখা যাবে ম্যাট ডেমনকে আর কেন মাইলসের ভূমিকায় থাকছেন ক্রিশ্চিয়ান বেল। ফেরারির প্রতিষ্ঠাতা এনজো ফেরারি ছোটবেলা থেকেই কার রেসিংয়ের স্বপ্ন দেখতেন। একসময় তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। তৎকালীন বিখ্যাত কোম্পানি আলফা রোমিওতে রেসিং ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। সহকর্মী হিসেবে পান তখনকার নামকরা রেসিং ড্রাইভার তাজিও নুভোলারিকে। আলফা রোমিওতে চাকরিরত অবস্থায় টিম ফেরারি প্রতিষ্ঠা করেন এনজো। এটি ছিল একটি কার রেসিং গ্রুপ। লুইজি সিনেত্তি ছিলেন একজন সফল ইতালিয়ান কার রেসার। ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত হলেও ১৯৪৬ সালে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে অনুষ্ঠিত ২৪ ঘণ্টার ‘লা ম্যানস’ এবং ‘স্পা ২৪ আওয়ার্স’ রেসে তিনি ফেরারি ১৬৬এমএম মডেলের গাড়ি নিয়ে জয় লাভ করেন। এটি ছিল কোনো ফেরারি গাড়ির প্রথমবারের মতো রেস জয় করার কীর্তি।
১৯৬৩ সালের দিকে ফোর্ড কোম্পানির প্রধান দ্বিতীয় হেনরি ফোর্ড, ফেরারি কোম্পানি কিনে নেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি এনজো ফেরারির কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু এনজো সরাসরি তা নাকচ করে দেন। হেনরি ফোর্ড অন্যভাবে এই ব্যর্থতার প্রতিশোধ নিতে চান। তিনি ‘লা ম্যানস’ রেসে ফেরারিকে হারানোর পরিকল্পনা করেন।
ওই সময় ‘লা ম্যানস’ রেসে ফেরারি ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৯৬০-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত একটানা ছয়বার ফেরারি ওই রেস জিতে আসছিল। ১৯৬৬ সালের মধ্যে ফেরারিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো গাড়ি ফোর্ডের হাতে চলে আসে। আর সেই গাড়িটি ছিল বিখ্যাত ‘ফোর্ড জিটি ৪০’। ১৯৬৬ সালের ‘লা ম্যানস’ রেসে ‘জিটি ৪০’ ফেরারির রাজত্বের অবসান ঘটায়। রেসের প্রথম তিনটি স্থানই দখল করে নেয় ‘জিটি ৪০’-এর তিনটি গাড়ি। ফেরারির অবস্থান ছিল ২৯তম! পরবর্তী তিন বছর ফোর্ডের রাজত্ব অক্ষুন্ন ছিল। ১৯৬৬-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর ওই রেসের প্রথম স্থান অর্জন করে ‘জিটি ৪০’। ফোর্ডের এই জয়যাত্রার নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন দু’জন মানুষ। অটোমোটিভ ডিজাইনার ও রেসিং ড্রাইভার ক্যারল শেলবি এবং ব্রিটিশ ড্রাইভার কেন মাইলস। তাদের বুদ্ধিমত্তা, একাগ্রতা আর শ্রমেই ফেরারিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় ফোর্ড। এই দু’টি চরিত্রে অভিনয় করা জনপ্রিয় দুই অভিনেতা ম্যাট ডেমন ও ক্রিশ্চিয়ান বেল সিনেমাটি নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। দু’জনেই এ সিনেমার সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ঢাকা/শান্ত
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন