নারী বান্ধব শিল্প : কোমর তাঁতে পিনন হাদি
শিরীন সুলতানা অরুনা || রাইজিংবিডি.কম
পার্বত্য এলাকার কোমর তাঁত শিল্প সম্পূর্ন নারী বান্ধব একটি শিল্প। নারীরাই শুধু এই কাজ করে থাকেন। সংসারের কাজকর্ম করে এতে সময় দেন তারা।
কোমর তাঁত কী?
কোমরের সঙ্গে দঁড়ি বেঁধে কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে কোমর তাঁত। তবে সম্প্রদায়ভিত্তিক পার্বত্য এলাকার কোমর তাঁতের ভিন্ন ভিন্ন নাম। চাকমা সম্প্রদায়ের সজপদর ও বেইন, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বিখান দৈ, মারমা সম্প্রদায়ের রাখেং নামে পাহাড়ে কোমর তাঁতের ভিন্ন ভিন্ন পরিচিতি রয়েছে।
পার্বত্য এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে কোমর তাঁত। সাধারণত বর্ষাকালে জুমে কাজসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে, কোমর তাঁতে তাদের তেমন একটা কাপড় বোনা হয় না । এর জন্য শীতের সময়কে বেছে নেয় তারা।
পিনন হাদি কী?
চাকমা সম্প্রদায়ের রমণীরা তাদের ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে পিনন খাদি পোষাক পরিধান করে থাকেন। পিনন ও হাদি দুটি অংশ।
চাকমা সম্প্রদায়ের রমণীরা তাদের যে ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরে তার নীচের অংশকে বলে 'পিনন' যা অনেকটা লুঙ্গির মতো। সাধারণত সেলাইবিহীন এই অংশটার দৈর্ঘ্য ৪.৫ হাত আর প্রস্থ ২.৫ হাত হয়। পিননের একদিকে নকশাসমৃদ্ধ আঁচল থাকে যাকে বলে চাবুকি। চাকমা সম্প্রদায়ের পিননের জমিন সাধারণত কালো, উপরে ও নীচে চওড়া রঙিন পাড় থাকে। পিনন পরার সময়ে চাবুকি বাম দিকে থাকে।
উপরের অংশের পোষাকের নাম হাদি। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৩.৫ হাত ও প্রস্থ ২.৫ হাত। হাদি দুই ধরনের হয়, রাংগাহাদি ও চিবিকটানা হাদি। রাংগাহাদিতে বিভিন্ন নকশা করা হয়। এই ধরনের হাদি সাধারণত কম বয়সী নারীরা পরিধান করে। বয়স্ক নারীরা চিবিকটানা হাদি ব্যবহার করেন যাতে কোন নকশা হয় না। আধুনিক নারীরা হাদির সাথে ম্যাচিং করে ব্লাউজ পরিধান করেন।
এই পোশাকের রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। এই প্রকারভেদের উপর তার দাম নির্ভর করে। একটি ভালো পিনন হাদি সেটের দাম ৩ থেকে ৭০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এখন আবার পিনন হাদির ফিউশনে অনেক নতুন নতুন পণ্য তৈরি হচ্ছে। পিনন ব্যাগ, জামা, ফ্লোর ম্যাট, পর্দা, ডিনার ম্যাট ইত্যাদি। এটি ঘরে বসে তৈরি করা যায় বলে নারীরা অবসর সময়টাকে এই কাজে লাগাতে পারে। এতে যেমন সময়টা কাজে লাগে তেমনি এটি পরিবারের একটা বিকল্প আয়ের উৎস।
অনেক সময় দেশের অন্যান্য জেলা থেকে আসা পর্যটকরা ধরনের পোশাক ক্রয় করে থাকেন, যা এমন পোশাকের চাহিদা ও আদিবাসীদের জীবন সম্পর্কে অন্যদের জানাতে সহযোগিতা করে ।
লেখক : স্বত্বাধিকারী, এস এস এগ্রো প্রোডাক্ট।
রাঙামাটি/সিনথিয়া
আরো পড়ুন