প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী শকুন
আবদুল মান্নান পলাশ || রাইজিংবিডি.কম
শকুন
আবদুল মান্নান পলাশ, চাটমোহর (পাবনা) : শকুন। এই পাখিটিকে বলা হয় প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী। নানা ধরনের মরা-পচা খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে এই শকুন। শকুনকে তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারি পাখি হিসেবে বিশেষায়িত করা হয়।
উপকারী পাখিটি মানুষেরই অসচেতনতা, অজ্ঞতা, অবহেলায় বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দিন দিন অস্বাভাবিকহারে শকুনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এভাবে চললে অদূর ভবিষ্যতে এরা যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এদের সকালের দিকে তেমন নড়াচড়া করতে দেখা যায় না। রোদের প্রখরতা কমলে এরা আকাশের অনেক উঁচুতে উড়ে উড়ে খাবার খোঁজে। খাবারের সন্ধান পেলে দ্রুত প্লেনের মতো নিচে নেমে আসে দলবেঁধে। গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করে। খাবার পর পানি পেলে এরা গোসল করে।
শকুন দিবাচর পাখি হলেও কখনও কখনও সন্ধ্যার পর খাবার খেতে দেখা যায়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দলবেঁধে বিচরণ করে। এরা শিকারি পাখি না হওয়ায় সুস্থ প্রাণির ওপর আক্রমণ করতে পারে না। শুধু মৃত প্রাণিই খেয়ে থাকে।
অতীতে যখন দেশে রাজশকুন ছিল তখন মৃত প্রাণি সামনে করে বাংলা শকুনদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যেতো। এর কারণ হল মরা গরু-ছাগলের শক্ত চামড়া ছেঁড়ার জন্য বাংলা শকুনের তুলনায় রাজশকুন আরও বেশি শক্তিশালী। একদল শকুন একটি বড় মরা গরু সাবাড় করতে মাত্র ২০ মিনিট সময় নেয়। এরা ছোট ছোট টুকরো হাড় আস্ত গিলে ফেলে।
শকুনের প্রজননকাল নভেম্বর থেকে জানুয়ারি। ডিম দেয়ার আগে সবুজ পাতা দিয়ে বাসায় বিছানার মতো বানায়। শকুন একটি মাত্র ডিম পাড়ে। ডিমটি নীলাভ সবুজ সাদা। কোনো কারণে ডিমটি নষ্ট হলে স্ত্রী শকুনটি তার বাসা ভেঙে ফেলে। ফলে সে বছরের প্রজনন হার দাঁড়ায় শূন্য। আর যদি ডিমটি নষ্ট না হয় তাহলে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ৬৫ থেকে ৮০ দিন বয়সে বাচ্চা উড়তে শেখে।
বাংলা শকুন, রাজ শকুন, সাদা গিদরী বা গিন্নী শকুন, লম্বা ঠোঁট শকুন আমাদের দেশীয় প্রজাতি। আর ভ্রমণকারী হিসেবে কালো শকুন আর গ্রিফন শকুন ছিল। বাংলা শকুন টিকে রয়েছে কোন রকমে। অথচ সত্তর দশকে রাজ শকুন আর বাংলা শকুনের দেখা মিলতো গ্রামাঞ্চলের বটবৃক্ষে। সেইসব বটবৃক্ষ ইটভাটায় উজাড় হয়ে গেছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ চিত্রগুলোতে দেখা যায় দল বেধে মৃতদেহের উপর বসে আছে তারা। এখন বাংলা শকুন ছাড়া আর কোন শকুন কারো চোখে পড়ে না। বন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী গোটা বাংলাদেশ জুড়ে মোট শকুনের সংখ্যা ২০০০ টিও নেই এখন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম জানান, আমাদের দেশের শকুন রক্ষার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, ডাইক্লোফেনাক-এর ব্যবসা ও ব্যবহার অবশ্যই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে উঁচু গাছগুলো যাতে আর কাটা না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। শকুনের ওপরে জরিপ চালিয়ে সমস্যা ও সংকট খুঁজে বের করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসব এলাকায় এখনও কিছু কিছু শকুন দেখা যায়, সেসব এলাকাকে শকুনের অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে হবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৪/টিপু
রাইজিংবিডি.কম